কুটীরের অধিবাসী দুইজন মাত্র ব্যক্তি, তাহাদের বর্ণ গাঢ় কৃষ্ণ; দেহের অবয়ব ও গঠন এমন সুদৃঢ় এবং পেশীবহুল যে দৃষ্টিমাত্র তাহাদের শারীরিক সামর্থ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। তাহদের কটিদেশে মাত্র একখণ্ড করিয়া সামান্য দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-বিশিষ্ট স্থূল বস্ত্র জড়ানো ছিল। সুকৃষ্ণ দেহের অন্যান্য অংশ সম্পূর্ণ অনাবৃত। ইতস্ততবিক্ষিপ্ত লাঠি ও তরবারিগুলি দেখিলে সহজেই অনুমান হয় যে, নিতান্ত শান্তিতে তাহারা জীবিকার্জ্জন করে না। তীব্রগন্ধী গঞ্জিকার ধূমে কুটীরটি পরিপূর্ণ, তাহারা পালা করিয়া গাঁজা টানিতেছিল। সেই জনমানবশূন্য বনপ্রদেশেও তাহারা অত্যন্ত সাবধানে অতি নিম্নকণ্ঠে কথোপকথনে নিরত ছিল।
একজন প্রশ্ন করিল, আচ্ছা, আমাদের এতে লাভ?—কণ্ঠস্বরে পাঠক নিশ্চয়ই পূর্ব্বপরিচিত ভিখুকে চিনিতে পারিতেছেন।
তাহার সঙ্গী উত্তর দিল, একটা মোটা টাকা। পাঠক বুঝিতেছেন ইনি আমাদের ভূতপূর্ব্ব সর্দ্দার ছাড়া আর কেহই নন —পাক্কা পাঁচটি হাজার টাকা। এক রাত্রের রোজগার হিসেবে মন্দ নয়। কি বল? ভাগীদার তো আর কেউ জুটছে না।
ভিখু উল্লাস গোপন করিতে পারিল না, চেঁচাইয়া উঠিল, তোফা। ভাটার মত তাহার গোল চোখ দুইটি চক্চক্ করিয়া উঠিল —তা হ’লে উকিল ব্যাটাকে রাস্তায় সাবড়ে দিয়ে দলিলটা হাত করলেই তো হয়! তার সঙ্গেই তো ওটা থাকবে! অন্য জায়গা থেকে ওটা সরানো কি সুবিধে হবে?
সর্দ্দার উত্তর দিল, যত গোল বাধিয়েছে তো ওই মাগী, ওই রাজমোহনের স্ত্রী! রাজমোহনের সঙ্গে আমার পরামর্শ বেটী সব শুনেছে
—আমরা যে দলিলটার সন্ধানে আছি মাধবের তা জানতে বাকি নেই। সে কি আর রীতিমত সেপাই-শান্ত্রী না দিয়ে দলিল পাঠাবে? আমরা