—আমাদের সংসার নেই নাকি?
—আছে নিশ্চয়, কিন্তু আমি তো এদের জানাতে পারব না ত কি ভাবে আমি জীবন নির্ব্বাহ করব।
সর্দ্দার তাহাকে বাধা দিয়া প্রভুত্বের ভঙ্গীতে বলিয়া উঠিল, চোপ। আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে থাকলে, তুমি স্বচ্ছন্দে তোমার বোনকে ছেলেপিলে সমেত তার স্বামীর কাছে পাঠাতে পার, সে গরিব কি বড়লোক তা তোমার দেখার দরকার কি? আর তোমার পিসী— তোমার মত অনেকেরই পিসী সে; নিজের পথ সে নিজেই দেখে নিতে পারবে।
রাজমোহনের দ্বিধা তখনও দূর হয় নাই। অনেকক্ষণ কথা-কাটাকাটি চলিল। শেষে সর্দ্দারের হুমকি এবং মাধব ঘোষের জমিদারি চিরদিনের জন্য পরিত্যাগের বাসনায় সর্দ্দারের প্রস্তাবে সে রাজী হইল।
তখনও দুপুর শেষ হয় নাই—রাজমোহন স্নান সারিয়া প্রাতরাশ গ্রহণের জন্য বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইল। প্রথমেই দেখা হইল তাহার বোন কিশোরীর সঙ্গে।
রাজমোহন বলিল, কিশোরী, সেই হতভাগীকে আমার কাছে আসতে বল্! আমার বাড়ি ছেড়ে আবার কেমন ক’রে পালাতে হবে তাই তাকে শিখিয়ে দেব। যা।
কিশোরী অবাক হইয়া বলিল, কার কথা বলছ দাদা?
কিশোরীর প্রশ্নে বিরক্ত হইয়া রাজমোহন দাঁত-মুখ খিঁচাইয়া বলিয়া উঠিল, কার কথা বলছি? কেন, তোর বউদির কথা! তোর বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পেয়েছে নাকি?
কিশোরী বলিল, বউদি তো বাড়িতে নেই।
রাজমোহন চমকাইয়া উঠিল, বলিল, বাড়িতে নেই, তার মানে? সকালে কি সে ফেরে নি?