পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
রাজমোহনের স্ত্রী

ঘটার কোন ও আশঙ্কা নাই বুঝিয়া সে পুনরায় নিজের কক্ষে ফিরিয়া আসিল।

 হঠাৎ তাহার মনের অন্ধকারে সে যেন আলোকরেখা দেখিতে পাইল। আচ্ছা, এই ঘটনার সহিত তাহার স্বামীর গুপ্তকথার কোনও সম্বন্ধ নাই তো! তারা কি করিবে স্থির করিয়া ফেলিল।

 কয়েক মুহূর্ত্ত পরে মথুর সে কক্ষে প্রবেশ করিল, তাহাকে আরও অস্থির আরও চঞ্চল দেখাইতেছিল বটে, কিন্তু তাহার চোখের কোণে যেন একটা গর্ব্বের আনন্দ। তারা যাহা দেখিয়াছে, সে সম্বন্ধে একটি কথাও বলিল না।

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

যাহারা বন্দী করিল ও যে বন্দী হইল

 আমাদিগকে দৃশ্যান্তরে যাইতে হইবে। ঘরখানি দেখিলে মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়, মেঝে হইতে ছাদের দূরত্ব অতি সামান্য; একটি মাত্র প্রদীপের ক্ষীণ আলোক গম্ভীরদর্শন স্থূল প্রাচীর-গাত্রে পড়িয়া ঘরখানিকে অধিকতর ভয়াবহ করিয়া তুলিয়াছিল। কক্ষটি আকারে ও আয়তনে এত ক্ষুদ্র, ইহার উচ্চতা এমন কম যে, দেখিলে মনে হয়, সাধারণ মানুষের বসবাসের জন্য ইহা সৃষ্ট হয় নাই, অপরাধীদিগের উপযুক্ত করিয়াই ইহা নির্ম্মিত। কক্ষটির একটি মাত্র দরজা, ক্ষুদ্র কিন্তু স্থূল লৌহ-নির্ম্মিত; দরজার আয়তনের তুলনায় ইহার হুড়কা ও খিল একটু বিরাটই বলিতে হইবে। এতদ্‌সত্ত্বেও এই কক্ষটির দৃঢ়তায় সন্দিহান হইয়াই যেন গৃহনির্ম্মাতা অদ্ভুত সাবধানতা অবলম্বন করিবার জন্য লৌহের পাত দিয়া সমস্ত কক্ষটি মুড়িয়া দিয়াছে। সেই অস্পষ্ট কম্পমান আলোকে কৃষ্ণবর্ণ ধাতু যেন ভ্রূকুটি করিতেছিল, মানুষকে জীবন্ত কবর দিবার যেন প্রতীক্ষা