ঘরের ভিতরেই কোথায় যেন কাপড়ের খস খস আওয়াজ হইল। দস্যুরা পরস্পর মুখ-চাওয়াচাওয়ি করিল, আর অপেক্ষা না করিয়া পলায়ন করাটাই যেন তাহারা নিরাপদ মনে করিতেছিল। মাধব তাহাদের মুখ দেখিয়া তাহাদের মনের অবস্থা বুঝিল, সে কাগজ ও কলম চাহিল। কাগজ-কলম তাহাদের সঙ্গেই ছিল। মাধব কাগজ-কলম লইয়া বাড়িতে প্রধান আমলার নামে চিঠি লিখিতে বসিল।
সর্দ্দার বলিল, আমি ব’লে যাই, তুমি লেখ; ফাঁকি দিয়ে যে আমাকে ধরিয়ে দেবে সেটি আমি হতে দিচ্ছি না। মনে রেখো, আমি এক সময় তোমার মত লিখতে পড়তে জানতাম।
মাধব অবাক হইয়া সর্দ্দারের দিকে চাহিল। সে সর্দ্দারের কথায় রাজি হইয়া তাহার নির্দ্দেশমত লিখিতে বসিল। সর্দ্দার বলিতে শুরু করিল, কিন্তু তখন অপদেবতার ভয় তাহার মনে নানা উত্তেজনার সৃষ্টি করিতেছিল, সে শান্তভাবে চিঠি লিখাইতে পারিতেছিল না। মাধব লিখিতে লাগিল।
সেই মুহূর্ত্তে শিকলের গভীর ঝনঝন শব্দের সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রবল দাপাদাপির আওয়াজ বজ্রনির্ঘোষের মত সেই ভীত আতঙ্কিত দলের কানে প্রবেশ করিল। পরক্ষণেই সেই অপার্থিব আর্ত্তনাদ —আরও উচ্চ আরও কর্কশ। ভিখু এক লাফে বারান্দায় পড়িয়া চীৎকার করিতে করিতে বাড়ির বাহির হইয়া গেল। সর্দ্দার ও বিচলিত হইয়া বারান্দায় আসিল। সে সেখানে যে দৃশ্য দেখিল, তাহাতেই আতঙ্কবিমূঢ় হইয়া দরজায় তালা বন্ধ করিবার অপেক্ষা না করিয়াই, পিছনে না চাহিয়াই দ্রুতগতিতে পলায়ন করিল। মাধব সম্পূর্ণ মুক্তিলাভ করিল।
ওই সকল অলৌকিক শব্দ এবং দস্যু দুইজনের অতর্কিত পলায়নে মাধব স্বয়ং এতদূর কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়াছিল যে, নিজের অবস্থা সম্যক উপলব্ধি করিবার সামর্থ্য তাহার ছিল না। সে কিয়ৎকালের জন্য স্থাণুর