ফিরে যাওয়ার শক্তি আমার ছিল না, কোন ও অজানা অপার্থিব শক্তি যেন আমাকে টেনে আনছিল। আমার স্বামীর দুঃখ যদি আমি প্রাণ দিয়েও ঘোচাতে পারতাম, তা হ’লে প্রাণ দিতেও আমি দ্বিধা করতাম না। সুতরাং ভেবে দেখ, তোমাকে দেখে আমার মনের কি অবস্থা হয়েছিল প্রথমটা! আমার স্বামীর দুশ্চিন্তার সঙ্গে তোমাকে জড়িয়ে আমার মন বিরূপ হয়ে উঠেছিল, কিন্তু তুমি বলছ, তুমি মাত্র আজ সন্ধ্যায় এখানে এসেছ। তা হ’লে নিশ্চয়ই অন্য কারণ আছে।
প্রত্যুত্তরে মাধব বলিল, তোমাকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হবে না— ওই যে শব্দ—তুমি কোন শব্দ শোন নি? রহস্যের সমাধান এখনও হয় নি।
তারা ভয়ে বিবর্ণ হইয়া গেল।
মাধব বলিল, ভয় পেও না, ভয় পাবার কিছু নেই। আমি যা দেখেছি এবং শুনেছি, তা বলছি। তুমি যদি আমাকে কথা দাও যে অনাবশ্যক ভয় তুমি পাবে না তবেই বলব—কথা দাও।
তারা বহুকষ্টে চাপা গলায় বলিল, বল। মাধব তখন ডাকাতদের সহিত কথোপকথনকালে যে সকল শব্দ শুনিয়াছিল তাহার বর্ণনা করিল। সে যতদূর পারিল এমন ভাবে বলিল, যাহাতে তারা ব্যাপারটিকে ভৌতিক কিছু মনে না করে।
অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক দুশ্চিন্তায় তারা পীড়িত হইতেছিল। স্ত্রীলোকেরা দার্শনিক নহে, ভূতের ভয় তাহারা স্বভাবতই করিয়া থাকে। তাহার মনে এই ভূতের ভয়ের সঙ্গে কৌতূহলও ছিল। স্বামীর দুশ্চিন্তার কারণ খুঁজিতে আসিয়া ভয়াবহ এমন কিছুর সন্ধান যে পাইবে, তাহা সে ভাবিতে পারে নাই। তাহার অনুতাপও হইতেছিল। সে মাধবকে তাহাকে বাড়ির ভিতরে পৌঁছাইয়া দিবার জন্য অনুরোধ করিল।
মাধব উত্তেজিত হইয়া বলিল, এত সহজেই হাল ছেড়ে দেবে? আমি তোমাকে শপথ ক’রে বলছি যে, ভয়ের কোনই কারণ নেই।—