প্রদীপের অস্পষ্ট আলোকেই শয্যাশায়িত মূর্ত্তিটি প্রকট হইয়া যাহার কথা মনে করাইয়া দিল সে মাতঙ্গিনী; শীর্ণ কৃশ, কিন্তু তথাপি অপার্থিব রূপ, সুন্দর।
বিংশ পরিচ্ছেদ
অনেক নারী অনেক পুরুষের সমকক্ষ
তারা ও মাধব মাতঙ্গিনীর প্রায়-নির্জ্জীব দেহখানি ধরাধরি করিয়া এমন একটি ঘরে লইয়া গেল, যেখানে অন্য কাহারও হঠাৎ প্রবেশের সম্ভাবনা ছিল না। তারার অসাধারণ সেবায় এবং বদ্ধ বায়ুতে অনেক দিন থাকার পর নির্ম্মল মুক্ত বাতাসের স্পর্শে তাহার বিবর্ণ মুখ রক্তাভ হইল এবং ঊষার অরুণরাগ পূর্ব্বগগন রঞ্জিত করিবার পূর্ব্বেই মাতঙ্গিনী পুনর্জ্জীবন লাভ করিল। তাহাকে আহার্য্য দেওয়া হইল, কিন্তু মাতঙ্গিনী সামান্যই আহার করিল। কিন্তু তাহাতেই সে খানিকটা বল পাইল। তারা জানালার উপর বসিয়া ধূসর পূর্ব্বাকাশের পানে চাহিয়া চাহিয়া মাতঙ্গিনীর দুঃখের ইতিহাস শুনিতে লাগিল। মাতঙ্গিনী মৃদুস্বরে ধীরে ধীরে সে কেমন করিয়া জীবিত অবস্থাতেই মৃতের কবরে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিল তাহাই বলিতেছিল।
সংক্ষেপে সেই অন্ধকার ইতিহাস এইরূপ। মথুর ঘোষ সুকীর মায়ের সঙ্গে যখন তাহাকে তাহার বাড়িতে পাঠাইয়াছিল, তখন মাতঙ্গিনী ধারণা করিতেই পারে নাই যে, কি সাংঘাতিক রাক্ষসের কবলে সে পতিত হইয়াছে। সুকীর মাকেও যথেষ্ট তালিম দেওয়া হইয়াছিল, পথে যাইতে যাইতে সে মাতঙ্গিনীকে জিজ্ঞাসা করিল, স্বামীর ঘরে তাহার ফিরিয়া যাইতে ভয় হইতেছে কি না!
মাতঙ্গিনী উত্তর করিয়াছিল, সুকীর মা, সত্যি কথা বলতে কি,