ভিতরে প্রবেশ করিয়া সেই নির্জ্জন অন্ধকার ঘরের অপরূপ সজ্জা দেখিয়া সে বিস্মিতও হইয়াছিল। সুকীর মাকে ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিতে গিয়া সে আরও চমৎকৃত হইয়া দেখিয়াছিল যে, বুড়ী অন্তর্দ্ধান করিয়াছে এবং বাহির হইতে দরজাও বন্ধ।
বুদ্ধিমতী মাতঙ্গিনী অবিলম্বে বুঝিতে পারে যে সে ফাঁদে পা দিয়াছে এবং সেই অবস্থায় কি করা কর্ত্তব্য তাহা নির্দ্ধারণ করিতেও তাহার বিলম্ব হয় নাই।
সন্ধ্যায় মথুর ঘোষ আসিয়া আপনাকে তাহার চরণপ্রান্তে নিক্ষেপ করে, মাতঙ্গিনী তাহাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করায় আহত ও ব্যথিত মথুর মনে মনে স্থিরপ্রতিজ্ঞ হয় যে, যেমন করিয়াই হউক সে তাহার প্রতিহিংসা ও লালসা চরিতার্থ করিবে।
মথুর বিদায় লইবার সময় পৈশাচিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া বলে, তোমাকে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হবে, প্রাণেশ্বরী।
মাতঙ্গিনীর দৃষ্টিতে যে আগুন ঝলকিয়া উঠিয়াছিল, তাহাতে কুড়িজন পুরুষের দৃষ্টি প্রতিহত হয়। সে বলিল, কখনই না, কখনই আমি তোমার হব না —তারপর সে মথুরের ঠিক সম্মুখে গিয়া দীর্ঘ দেহ দীর্ঘতর করিয়া বলিয়াছিল, দেখ, আমার দিকে চাও, আমি নারী হ’লেও যুবতী, গায়ের জোর তোমার চাইতে আমার কম নয়; —না, তুমি বুঝি সাঙ্গোপাঙ্গ ডাকবে?
মথুর ঘোষ শক্তিপরীক্ষার এই অপরূপ আহ্বানে স্তম্ভিত হইয়াছিল। কিয়ৎক্ষণ পরে আত্মস্থ হইয়া সে বলিয়াছিল, তোমার জঠরাগ্নি আমার সাহায্য করবে, স্ত্রীলোকের বিরুদ্ধে আমি অন্য অস্ত্র প্রয়োগ করি না।
মাতঙ্গিনী বলিয়াছিল, হ্যাঁ, উপবাসই আমার একমাত্র সহায়।
মথুর স্থির করিয়াছিল মাতঙ্গিনীকে খাইতে না দিয়া তাহার প্রস্তাবে রাজি করাইবে, মাতঙ্গিনী স্থির করিয়াছিল সে উপবাস করিয়া মরিবে।