হেম অস্থিরভাবে বলিয়া উঠিল, দিদি, জবাব দিচ্ছ না কেন? হায় হায়, আবার বুঝি আমাদের ছাড়াছাড়ি হবে!
হতাশ হেম পুনরায় বলিল, আচ্ছা দিদি, তুমি কার জন্যে আমাদের ছেড়ে যাবে?
মাতঙ্গিনী বলিল, বাবার কাছে যাব।
একবিংশ পরিচ্ছেদ
জীবন-গ্রন্থের শেষ অধ্যায়—এবং এই গ্রন্থেরও
সেদিন সন্ধ্যায় ঝড় বহিল, চারিদিক কালো হইয়া আসিল। বাতাসের গর্জ্জন, সঙ্গে সঙ্গে অবিশ্রাম বৃষ্টির পর, বজ্রনিনাদে আকাশ কাঁপিয়া কাঁপিয়া উঠিল। মথুর ঘোষ একা বসিয়া ছিল। সে যেন ঝড়ের মুহুর্মুহু বিশ্রামের মধ্যে শাঁখের ধ্বনির মত একটা শব্দ শুনিতে পাইল— তাহার মনে হইল, দুইবার সে যেন স্পষ্ট শুনিয়াছে। প্রথমটা সে ভাবিল, যাহাদের সাহায্য তাহার জীবনে কলঙ্ক ও দুর্দ্দশা আনয়ন করিয়াছে, তাহাদের আহ্বান সে আর গ্রাহ্য করিবে না; কিন্তু ইশারার শব্দ প্রতিবারেই উচ্চ হইতে উচ্চতর হইয়া উঠিল, আহ্বানের গুরুত্ব মথুর ক্রমশই অধিক অনুভব করিল। অবশেষে সে উঠিয়া পড়িল এবং ঝড় মাথায় করিয়া নির্দ্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হইল —এই স্থানেই বহু কলঙ্কিত অভিনয়ের সূচনা ইতিপূর্ব্বে হইয়াছে। একটি গাছের নীচে যে মূর্ত্তিটি দণ্ডায়মান ছিল, দস্যু-সর্দ্দার বলিয়া তাহাকে চিনিয়া লইতে মথুরের বিলম্ব হইল না।
একটু ব্যঙ্গ করিয়াই মথুর বলিল, ব্যাপারখানা কি? তোমাদের সঙ্গে অনেক খেলাই হ’ল, এবার আমাকে রেহাই দাও। কলঙ্ক যথেষ্ট হয়েছে—যথেষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা তোমরা করেছ।
সর্দ্দার শান্তভাবে জবাব দিল, জোচ্চুরির কাজ আমরা কিছু করি নি,