পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
১১

 “অসমসাহসের কথা শুনিয়া রাজমোহন একেবারে অগ্নিসম হইয়া উঠিলেন; বজ্রনাদবৎ চিৎকারে কহিলেন, আমি তোকে হাজার বার বারণ করেছি কি না? এবং ব্যাঘ্রবৎ লম্ফ দিয়া চিত্রপুত্তলিসম স্থিররূপিণী সাধ্বীর কোমল কর বজ্রমুষ্টে এক হস্তে ধরিয়া প্রহারার্থ দ্বিতীয় হস্ত উত্তোলন করিলেন।

 “অবলাবালা কিছু বুঝিলেন না, প্রহারোদ্যত হস্ত হইতে এক পদও সরিয়া গেলেন না, কেবল এমন কাতর চক্ষে স্ত্রীঘাতকের প্রতি চাহিয়া রহিলেন যে, প্রহারকের হস্ত যেন মন্ত্রমুগ্ধ রহিল। ক্ষণেক নীরব হইয়া রহিয়া রাজমোহন পত্নীর হস্ত ত্যাগ করিল; কিন্তু তৎক্ষণাৎ পূর্ব্বমত বজনিনাদে কহিল, তোরে লাথিয়ে খুন করব।”

 তরুণী তথাপি নীরব, কেবল তাহার চোখ দিয়া দরদরধারে জল ঝরিতে লাগিল। ইহা দেখিয়া রাজমোহন কিঞ্চিৎ নরম হইল। তাহার হাত আর চলিল না বটে, কিন্তু রসনা অবিরল কটূক্তি বর্ষণ করিয়া চলিল। তাহাতেও যখন তরুণী কোন কথা কহিল না, তখন রাজমোহন ধীরে ধীরে শান্ত হইল।

 রাজমোহনকে শান্ত হইতে দেখিয়া পিসীর সাহস বাড়িল। তিনি অগ্রসর হইয়া ভ্রাতুষ্পুত্রবধূর হাত ধরিয়া তাহাকে ঘরের ভিতর লইয়া গেলেন এবং যাইতে যাইতে অত্যন্ত সাবধানে রাজমোহনের প্রতি দুইএকটি বাক্যবাণ নিক্ষেপ করিতে ছাড়িলেন না। রাজমোহনের রাগ যখন পূরাপূরি পড়িয়া আসিয়াছে বুঝিলেন, তখন তিনি একটি একটি করিয়া রাজমোহনের সমস্ত কটূক্তিরই জবাব দিলেন। রাজমোহন নিজের রাগে নিজেই গজরাইতেছিল, পিসীর বাক্যবাণের প্রতি সে বড় একটা নজর দিল না। শেষে পিসী-ভাইপো নিরস্ত হইয়া দুইজনে দুই দিকে গেলেন। পিসী বউমাকে শান্ত করিতে গেলেন, রাজমোহন কাহার মুণ্ডপাত করিবে তাহাই ভাবিতে লাগিল।