পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
১৫

সে করিল না। তাহার মৃত্যুর পর তাহার তিন পুত্রের ভাগ্যেই ভাগবাঁটোয়ারা হইয়া প্রচুর পৈতৃক অর্থলাভ ঘটিল। বহুদিনের অধিকারের ফলে তখন তাহারা এই অর্থের মালিকান স্বত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হইয়াছে— তাহাদিগের পিতা যে ভয়ে সংযত হইয়া জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিয়াছিল তাহারা তাহা করা আবশ্যক মনে করিল না। তাহারা জমিদারি খরিদ করিতে লাগিল, বড় বড় ইমারত নির্ম্মাণ করাইল এবং তাহাদের অর্থের অনুপাতে আড়ম্বর ও চাল বাড়াইয়া চলিল। জ্যেষ্ঠ রামকান্ত খুব হিসাব করিয়া সুপরিচালনার ফলে তাহার নিজের অংশ যথেষ্ট বৃদ্ধি করিল এবং বুড়া বয়স পর্য্যন্ত বাঁচিয়া একমাত্র পুত্র মথুরের সক্ষম হাতে সম্পত্তি ন্যস্ত করিয়া গেল। মথুরের সঙ্গে ইতিপূর্ব্বে পাঠকের পরিচয় হইয়াছে। পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রকোপে দেশের প্রাচীন রীতিনীতির যে পরিবর্ত্তন সাধিত হইতেছিল, রামকান্তের তাহা ভাল ঠেকিত না। সে বরাবরই ইংরেজী স্কুলে পুত্রের শিক্ষা দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিল। কারণ, এই ইংরেজী স্কুলগুলিকে সে শুধু অনাবশ্যক মনে করিয়াই ক্ষান্ত ছিল না, ইহাদের দ্বারা দেশের সত্যকার ক্ষতির আশঙ্কা করিত। মথুর বাল্যকাল হইতে পিতাকে জমিদারি পরিচালনায় সাহায্য করিত এবং জাল-জুয়াচুরি প্রজাশাসন ইত্যাদি ব্যাপারে খুব পাকা হইয়া উঠিয়াছিল।

 বংশীবদনের দ্বিতীয় পুত্র রামকানাইয়ের ভাগ্য ছিল সম্পূর্ণ অন্যরূপ। সে স্বভাবতই অলস ও অমিতব্যয়ী ছিল বলিয়া অত্যল্পকাল মধ্যে নানা বৈষয়িক গোলযোগের সৃষ্টি করিল। তাহার বাড়ি ও বাগান ছিল সব চাইতে জমকালো, কিন্তু তাহার স্থাবর সম্পত্তির আয় ছিল না বলিলেই হয় এবং বৈষয়িক এমন অব্যবস্থাও আর কাহারও ছিল না। তাহার চারি পাশে একদল ফন্দীবাজ মোসাহেব জুটিয়া নানা ফিকিরে তাহার বিশ্বাসী হইয়া উঠিয়াছিল। অবস্থা যখন খারাপ তখন তাহারা নিজেদের কল্পিত কোনও বিশেষ ব্যবসায়ে যোগদান করিলে কি ভাবে অবস্থা ফিরানো