যাইতে পারে, সে বিষয়ে রঙ চড়াইয়া নানা কথা বলিয়া তাহাকে প্রলুব্ধ করিল। রামকানাই তাহাদের উপদেশ গ্রহণ করিল এবং নিজেকে সম্পূর্ণ তাহাদের হাতে ছাড়িয়া দিয়া কলিকাতায় বাস উঠাইয়া আনিল। বলা বাহুল্য, পরামর্শদাতারা একটু একটু করিয়া ব্যবসায়ে সে যে টাকা ফেলিয়াছিল তাহার সবটুকুই গ্রাস করিয়া তাহাকে এমন অবস্থায় আনিয়া ফেলিল যে, অনতিবিলম্বে তাহার অব্যবস্থিত ও অবহেলিত স্থাবর সম্পত্তি নিলামে চড়িল।
রামকানাইয়ের শহরে বাস করার একটি ফল হইয়াছিল ভাল—শহরের লোকদের দেখাদেখি সে তাহার পুত্রের কলিকাতায় যতটা সম্ভব ততটা শিক্ষা পাইবার ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছিল। হিন্দু পিতার যাহা চরম কাম্য—এক অপরূপ সুন্দরী বালিকার সঙ্গে পুত্রের বিবাহ দিয়া সে কামনাও সে চরিতার্থ করিয়াছিল।
কলিকাতার সন্নিকটবর্ত্তী কোনও গ্রামের এক দরিদ্র কায়স্থ বড়াই করিত যে, দেবতা তাহাকে যে মহামূল্য সম্পত্তির অধিকারী করিয়াছেন তাহার তুলনা মেলে না—রূপে, গুণে, কর্ত্তব্যবুদ্ধিতে ও বিনয়নম্র ব্যবহারে তাহার দুই কন্যার জোড়া নাই। কিন্তু যে অদৃষ্ট-দেবতা কোমলপ্রাণ বাঙালী ঘরের অপরূপ সুন্দরী ও অতিকোমলপ্রাণা বালিকাদের সঙ্গে অতি অপদার্থদের যোগ ঘটাইয়া থাকেন, তিনিই তাহার জ্যেষ্ঠা কন্যা সহৃদয়া ও সুন্দরী মাতঙ্গিনীকে বর্ব্বর রাজমোহনের বাহুবন্ধনে নিক্ষেপ করিলেন। বিবাহ হওয়ার পরেও মাতঙ্গিনীর পিতার বিশ্বাস ছিল যে, বর মাতঙ্গিনীর অনুপযুক্ত হয় নাই। রাজমোহন তখন পূরা জোয়ান; বয়সের বৈষম্য সত্ত্বেও তাহা মানিবার প্রয়োজন হয় নাই। রাজমোহন দেখিতে সুপুরুষ ছিল না; কিন্তু লোকে তখন কিশোর বর খুঁজিতে গেলেই সৌন্দর্য্য দেখিত—যৌবনে যে পা দিয়াছে তেমন বরের চেহারার দিকে লক্ষ্য দেওয়া হইত না। পাশের গ্রামেই তাহার বাস ছিল; বিবাহ হইয়া গেলেও