ভূমিকা
উপন্যাস হিসেবে ‘রাজমোহনের স্ত্রী’র (Rajmohan’s Wife) মূল্য যাহাই হউক ইহার ঐতিহাসিক মূল্য অসামান্য। বাংলাদেশের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকের প্রথম উপন্যাস বাঙালী পাঠকের কাছে চিরদিনই কৌতুক ও কৌতূহলের বিষয় হইয়া থাকিবে। বঙ্কিমচন্দ্রের বাল্য ও কৈশোরের সাহিত্য-সাধনার যে মুদ্রিত ইতিহাস পাওয়া যায় তাহাতে দেখা যায় যে, তিনি ১৮৫২ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে (১৩ বৎসর ৮ মাস বয়সে) কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকরে’ সর্ব্বপ্রথম লিখিতে আরম্ভ করেন এবং প্রায় দুই বৎসরকাল ওই পত্রিকাতেই নানাবিধ গদ্য-পদ্য রচনা প্রকাশ করেন। তাঁহার প্রথম গ্রন্থ ‘ললিতা। পুরাকালিক গল্প। ‘তথা মানস’ ১৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দেই রচিত হইয়াছিল। ইহা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় ১৮৫৬ খ্রীষ্টাব্দে। ওই সালে বঙ্কিমচন্দ্র কদর্য্য বাংলা গদ্যে ওই পুস্তকের এক পৃষ্ঠা ভূমিকা মাত্র লিখিয়াছিলেন। ১৮৫৩ হইতে ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দ পর্য্যস্ত তাঁহার অন্য কোন সাহিত্যকর্ম্মের ইতিহাস আমরা অবগত নই। এই কালের মধ্যে তিনি এণ্ট্রান্স হইতে বি. এ. পর্য্যন্ত পাঠ সমাপ্ত করিয়াছেন এবং ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দের ৭ আগস্ট হইতে ডেপুটিগিরি চাকুরিতে বহাল হইয়া যশোহর-মেদিনীপুর-খুলনা-বারুইপুর করিয়া ফিরিতেছেন। এই সময়ে তিনি খাঁটি ইংরেজীনবিশ; মাতা বঙ্গবীণাপাণির প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিয়া বিমাতার সেবায় মগ্ন। ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে কিশোরীচাঁদ মিত্র সম্পাদিত ‘ইণ্ডিয়ান ফীল্ড’ নামক ইংরেজী সাপ্তাহিকে বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকের প্রথম উপন্যাস ইংরেজী ভাষায় লিখিত Rajmohan’s Wife ধারাবাহিকভাবে বাহির হইতে থাকে। ‘ইণ্ডিয়ান ফীল্ডে’ সম্পূর্ণ হইলেও এই পুস্তক বঙ্কিমচন্দ্রের জীবিতকালে পুস্তকাকারে বাহির হয় নাই।