৵০
কারণ অনুমান করা যায় যে, মাতৃভাষার প্রতি বঙ্কিমচন্দ্রের আকর্ষণ এই বৎসরেই প্রবল হইয়া থাকিবে। তিনি সম্ভবত ইংরেজীতে মৌলিক সৃষ্টির আশা পরিত্যাগ করিয়া মাতৃভাষার সাহায্যই গ্রহণ করিতে মনস্থ করিয়াছিলেন। নিজের রচিত ইংরেজী উপন্যাসেরই অনুবাদ করিয়া তিনি এই সঙ্কল্প কাজে পরিণত করিতে চাহিলেন। এক অধ্যায় দুই অধ্যায় করিয়া মাত্র সপ্তম পরিচ্ছেদের প্রায় শেষ পর্য্যন্ত (পংক্তি কয়েক বাকি ছিল) অনুবাদ করিয়া তিনি আর পারিলেন না। তাঁহার মত মৌলিক সৃষ্টি-প্রতিভা যাঁহার, তিনি অনুবাদ বা অনুসরণে তৃপ্তিলাভ করিতে পারেন না, তা সে হউক না নিজেরই অনুসরণ। সুতরাং ‘রাজমোহনের স্ত্রী’র বঙ্কিমকৃত বাংলারূপ আর প্রকাশ পাইল না, প্রায় সূত্রপাতেই বিনষ্ট হইল।
কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয়, সেই পাতা কয়টা রহিয়া গিয়াছে। বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্যুর পর তাঁহার দপ্তর ঘাঁটিয়া ভ্রাতুষ্পুত্র ও জীবনীকার শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয় সেই খণ্ডিত অনুবাদের পাণ্ডুলিপিটি সংগ্রহ করেন। শচীশচন্দ্র যদিও জানিতেন যে, বঙ্কিমচন্দ্র একদা Rajmohan's Wife লিখিয়াছিলেন[১] তথাপি কেন জানি না পাণ্ডুলিপি পড়িয়া সেটি যে ওই Rajmohan's Wifeএর অনুবাদ তাহা তিনি পরিতে পারেন নাই, সেই পাণ্ডুলিপিতে রাজমোহন ও রাজমোহনের স্ত্রীর বারংবার উল্লেখ
- ↑ “বঙ্কিমচন্দ্রও একদিন “Rajmohan's wife” নামক গল্প ইংরাজি ভাষায় লিখিয়াছিলেন। গল্প শেষ হইবার পূর্ব্বেই তাঁহার ভুল ভাঙ্গিয়াছিল। তিনি “Rajmohan's wife” ও “Adventures of a young Hindu” ছাড়িয়া “দুর্গেশনন্দিনী” লিখিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন।”—শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বঙ্কিম-জীবনী’ তৃতীয় সংস্করণ, পৃ. ১০৮। শেষের সংবাদও ঠিক নহে, Rajmohan's Wife ‘ইণ্ডিয়ান ফীল্ডে’ সম্পূর্ণ বাহির হইয়াছিল। শেষোক্ত পুস্তক Adventures of a Young Hinduর কোনো সন্ধান আজও পর্য্যন্ত পাওয়া যায় নাই।