বাহিরে আসিয়া যে কৌশলে দরজা খুলিয়াছিল, ঠিক সেই কৌশলে আবার তাহা বন্ধ করিল। তাহার পর, প্রদীপ নিবাইয়া বাড়ির চারিদিকে একবার টহল দিতে দিতে প্রত্যেক ঘরের দরজায় মৃদু আঘাত করিয়া নিদ্রিতদের নাম ধরিয়া ধীরে ধীরে ডাকিয়া কাহাকেও জাগ্রত না দেখিয়া তাহার সঙ্গীর কাছে ফিরিয়া গেল।
স্বামীর পদশব্দ মিলাইতে না মিলাইতে মাতঙ্গিনী শয্যা ত্যাগ করিয়া আবার নিঃশব্দপদসঞ্চারে জানালার ধারে আসিয়া দাঁড়াইয়া নিম্নলিখিত কথাবার্তা শুনিল।
কোন দিক দিয়া ভয়ের কোনও আশঙ্কা নাই জানিয়া রাজমোহনের অজ্ঞাত সঙ্গী কহিল, তুমি তা হ’লে এই ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে রাজি আছ?
বিশেষ রাজি নই।—রাজমোহন জবাব দিল।—অবিশ্যি এতদূর এগিয়ে সাধুগিরি ফলাবার মতলব আমার নেই, কিন্তু লোকটাকে আমি পছন্দ না করলেও সে আমার অনেক উপকার করেছে।
ধূর্ত্ত আগন্তুক প্রশ্ন করিল, তা হ’লে তাকে তোমার ভাল লাগে না কেন?
রাজমোহন বলিল, কেন? ভাল সে আমার অনেক করেছে বটে, কিন্তু মন্দও কম করে নি, সম্ভবত ভালর চাইতে মন্দই করেছে বেশি।
—তা হ’লে আমাদের সাহায্য করছ না কেন?
—করব, কিন্তু আমি যা চাইব তা আমাকে দিতে হবে। আমি এ পাপ জায়গা ছেড়ে অন্যত্র উঠে যেতে চাই, কিন্তু অন্যত্র গেলে আমার দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোটা ভার হবে। সুতরাং যাতে অন্য জায়গায় উঠে গেলেও আমার বিপদ হবে না, সেই পরিমাণ টাকা আমার চাই। তোমাদের সাহায্য করলে তোমরা যদি টাকাটা পাইয়ে দাও, আমি রাজি আছি।