করিতে হইবে; তাহাকেই যাইতে হইবে। ভাবিতেই, ভয়ে তাহার সমস্ত অন্তরাত্মা শিহরিরা উঠিল। রাস্তায় সাক্ষাৎ বিপদ যদিও অনেক, তবু সেগুলিই বড় বিপদ নয়। নিশীথ রাত্রের ভয়সঙ্কুল নির্জনতায়, অরণ্যসঙ্কুল পথে একা যুবতী নারী সে,—স্বভাবতই সে সব কিছুকেই বিশ্বাস করিত—বনে বনে যে সকল অলৌকিক জীবের বিহারভূমি তাহাদের সম্বন্ধে শৈশবে অনেক গল্প সে শুনিয়াছে, তাহার কল্পনাপ্রবণ মনে সেগুলি আরও ভীষণ, আরও ভয়াবহ রূপ ধরিয়া বাসা বাঁধিয়া আছে। তাহা ছাড়া, ভীষণ একদল দস্যু নিকটেই কোথায় রহিয়াছে, যদি তাহাদের হাতে পড়ে! ফল কি হইবে কল্পনায় ভাবিয়া লইয়া সে শিহরিয়া উঠিল। যদি এই দস্যুদলে তাহার স্বামী থাকে! মাতঙ্গিনী আবার শিহরিল।
কিন্তু মাতঙ্গিনীর হৃদয়ে সাহস ছিল, তাহার ভগিনী ও ভগিনীপতির জন্য জীবন পর্য্যন্ত বিসর্জ্জন দিতে পারে, ইহা সে মনে মনে অনুভব করিল।
ভয়াবহ বিপদের কথা তাহার যতই মনে হইতে লাগিত, তাহার হৃদয়ের মহৎ প্রেম ততই যেন বৃদ্ধি পাইয়া উদ্বেল হইতে লাগিল, এই প্রেমের বেদীতে সে তাহার ভগ্ন হৃদয়ের দুঃসহ ভারস্বরূপ জীবনকেই উৎসর্গ করিতে চাহিল। কিন্তু নারী-হৃদয়ের অন্য এক অনুভূতি বাধার সৃজন করিল। নিশীথ রাত্রে একাকী মাধবের গৃহে সে যাইবে। তাহাকে কে বিশ্বাস করিবে? মাধব নিজে কি ভাবিবে? ভ্রূকুঞ্চিত করিয়া নিশ্চলভাবে দাঁড়াইয়া সে ভাবিতে লাগিল।
কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ়া মাতঙ্গিনী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল, ঘরের গুমট গরমে সে পীড়িত হইতেছিল—সাহস করিয়া সে ছোট জানালাটি খুলিয়া ফেলিল। গাছের ছায়া দীর্ঘ হইয়া পড়িয়াছে এবং দূর চক্রবাল-সীমান্তে চাঁদ ঝুলিয়া পড়িয়াছে। তাহার রশ্মি ক্ষীণ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চন্দ্র অন্তর্হিত হইবে, দস্যুদের উন্মাদ চীৎকার শ্রুত হইবে। মাতঙ্গিনী ভাবিল, তখন?