মাতঙ্গিনীও একবার চকিতের মত মুখ ফিরাইয়া দেখিল, আগন্তকেরা সেই নিরীহ শান্তিভঙ্গকারিণীর সন্ধান না পাইয়া ফিরিয়া গেল।
মাতঙ্গিনী আর ও কিয়ৎকাল জলের ভিতরে রহিল, যখন তাহাদের পদশব্দ দূরে সম্পূর্ণ মিলাইয়া গেল, সে বুঝিল তাহারা আমবাগানে প্রবেশ করিয়াছে। তখন সে সলিল-আশ্রয় ছাড়িয়া বাহিরে আসিল এবং ধীরে পরে শাড়ির জল নিংড়াইয়া ফেলিল, চাদরটি জলাশয়েই রহিল। পুনরায় সেই ভয়াবহ পায়ে-চলার পথ ধরিয়া চলিবার দুঃসাহস না দেখাইয়া সে জলের ধারে ধারে চলিল—যে পাড় ছাড়িয়া আসিল তাহারই পাশের পাড় ধরিয়া। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে সে বার বার পিছনে চাহিয়া দেখিতে লাগিল। এখানকার পথঘাট তাহার সম্পূর্ণ পরিচিত, কারণ মধুমতীতে স্নান করিতে যাওয়া সম্পূর্ণ বারণ হইলেও এই পুকুরে স্নানাদির জন্য আসার নিষেধ ছিল না। দুঃসাহসিকা সুন্দরী এই পাড় হইতে যে পাড় সে ছাড়িতে বাধ্য হইয়াছে সেই পাড়ে যাওয়ার একটি সংকীর্ণ পথ ধরিয়া চলিল—গভীর ঝোপের ভিতর দিয়া এই পথ। অবশেষে সে নানা আশঙ্কার কল্পনা করিতে করিতে সেই পরিত্যক্ত পাড়ে আসিয়া পৌঁছিল, যে আম্রকুঞ্জ এবং তৎসন্নিহিত যে জানোয়ারটি তাহাকে বিপন্ন করিয়াছিল, তাহা হইতে অনতিদূরে সে দাঁড়াইল। কিন্তু নূতন এক বিপদ আসিয়া যেন তাহার পথরোধ করিল। রাধাগঞ্জে আসা অবধি সে মাত্র দুইবার তাহার বোনের বাড়ি গিয়াছে এবং কোন বারেই পায়ে হাঁটিয়া যায় নাই, বদ্ধ পাল্কীতে যাতায়াত করিয়াছে। যতটুকু পথের সন্ধান সে রাখিত তাহা লোকের মুখে মুখে শুনিয়া। সুতরাং চৌমাথার কাছে আসিয়া তাহাকে দাঁড়াইতে হইল। নিতান্ত বিপন্নের মত সে চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিতে করিতে হঠাৎ যেন ভাগ্যবলে দীর্ঘ দেবদারুগাছের মাথা দেখিতে পাইল। সে জানিত, এই দেবদারুগাছটি মাধবের বাড়ির ঠিক সম্মুখে অবস্থিত। সে তৎক্ষণাৎ সেই দিকের পথ ধরিয়া চলিতে চলিতে অনতিবিলম্বে মাধবের