পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
৫১

এসেছি যেন আর কেউ না জানতে পারে। জানতে পারলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি হবে।

 মাধব তাচ্ছিল্যভরে গলা চড়াইয়া বলিল, প্রাণ? তোমার প্রাণ নিয়ে টানাটানি করবে কে শুনি?

  মাতঙ্গিনী বলিল, চুপ।

 মাধব নিজেকে সংযত করিয়া কহিল, ওঃ, আমার খেয়াল ছিল না। আর ভুল হবে না।

 —করুণা আর হেমকেও ব’লে যাও তারা যেন গোল না করে।

 —করুণাকে সামলানোই মুশকিল, আমি মাগীকে দাবড়ি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখব। তুমি হেমের সঙ্গে দরজায় খিল দিয়ে থাকবে—বাড়ির আর কেউ যেন তোমায় না দেখতে পায়। আমি ফিরে এসে তোমাকে আরও নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাব।

 এই কথা বলিয়া মাধব তাহার পত্নী এবং করুণার নিকটে গিয়া মাতঙ্গিনীর বিষয় তাহাদিগকে সম্পূর্ণ নীরব থাকিতে বলিয়া দ্রুতপদে বহির্ব্বাটীর দিকে ধাবিত হইল ও অচিরাৎ দারোয়ানমহলে উপস্থিত হইল।

 মাতঙ্গিনীর বুদ্ধিকে মাধব শ্রদ্ধা করিত, সে যে প্রতারিত হয় নাই ইহা ঠিক, তাহা ছাড়া তাহাকে ঠকাইতে সে এত ক্লেশ স্বীকারই বা করিবে কি জন্য? সুতরাং ডাকাতদলকে বাধা দিবার জন্য সে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়া গেল। ধরণী-বক্ষ নিবিড় অন্ধকারে নিমজ্জিত হইবার পূর্ব্বেই দেখা গেল, গৃহের ছাদে বহু মনুষ্যাকৃতি জীব আকাশের পটভূমিতে নড়িয়া চড়িয়া বেড়াইতেছে। ইহারা জমিদারের বাছা বাছা প্রজা, জমিদার-বাড়ির সন্নিকটেই বাস করে এবং যে কোনও সময়ে দেখিতে দেখিতে ইহাদের মধ্য হইতে একদল লাঠিয়াল সংগ্রহ হইতে পারে। লাঠি, সড়কি, ইট প্রভৃতি অস্ত্র-শস্ত্রে ইহাদের প্রায় সকলেই সজ্জিত ছিল—আক্রমণকারীরা প্রাচীরের ধারে আসিলে অথবা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করিলে এগুলির প্রয়োগে