পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
রাজমোহনের স্ত্রী

তাহাদিগকে বিপর্য্যস্ত করিবার জন্য তাহারা উদ্যত হইয়া রহিল। এ কথা আমরা বলি না যে, নিশীথরাত্রের এই যোদ্ধৃবৃন্দ সকলেই তাহাদের হস্তধৃত লাঠির মত কঠিনহৃদয় ছিল, অনেকেই যে অকালনিদ্রাভঙ্গে বিরক্ত হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। তাহাদের জমিদারের ঘন ঘন কঠোর আদেশ শ্রবণ করিয়া যদি না তাহারা বুঝিতে পারিত যে পলাইয়া তাহার বিরক্তির উদ্রেক করা অপেক্ষা সেখানে দণ্ডায়মান থাকাই অধিকতর নিরাপদ, তাহা হইলে অনেকেই মহানন্দে পলায়ন করিত। অবশ্য সকলের মনেই যথেষ্ট সাহস ছিল, কারণ, বাড়ির ছাদে লোভনীয় কিছু না থাকাতে ডাকাতেরা সেখানে পৌঁছিবে না, এ কথা তাহারা জানিত; সুতরাং আশ্বস্ত হইয়া সাহসী বীরেরা সদম্ভে নিজ নিজ নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়াইয়া রহিল। উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের পাঁড়ে ও চৌবে বংশের পাঁচ ছয় জন তলোয়ার, ঢাল, সড়কি ও গাদাবন্দুক হাতে সদর-দরজায় পাহারা দিতে লাগিল। চার-পাঁচজন সতর্ক দৃষ্টি রাখিয়া এদিক ওদিক টহল দিয়া ফিরিতে লাগিল, প্রয়োজন বুঝিলেই তাহারা অন্যদের সতর্ক করিবার জন্য আদিষ্ট হইল। বাড়ির ভিতরে যে সমস্ত বাক্স ও সিন্দুকে মূল্যবান তৈজসাদি, গহনা, নগদ টাকা, ক্ষুদ্রায়তন অথচ বহুমূল্য বাসন-কোসন ছিল, পূর্ব্বোক্ত হাতীর দাঁতের বাক্সটিসহ সেগুলি কোথায় যেন অন্তর্দ্ধান করিল। সেই সুবৃহৎ প্রাসাদের অসংখ্য কক্ষশ্রেণীর মধ্যে গুপ্ত স্থানসমূহে সেগুলি আশ্রয় লাভ করিল— এই সকল গুপ্ত স্থানের সন্ধান যাহারা জানে না, তাহাদের পক্ষে সেগুলি খুঁজিয়া বাহির করা কঠিন। বাটীস্থ অনেকেই এসবের খবর জানিত না।

 সাধারণত মাধব মৃদুস্বভাব ও নমনীয়, কিন্তু উত্তেজনার মুহূর্ত্তে তাহার শক্তি ও কার্য্যতৎপরতা এমন প্রচণ্ড বেগ ধারণ করিত যে, ভীরু ও অস্থিরচিত্ত ব্যক্তিরা সন্ত্রস্ত হইয়া পড়িত। এতদসত্ত্বেও এমন স্ত্রীলোকের অভাব হইল না, যাহার এক হাতে উলঙ্গ শিশুদের টানিতে টানিতে অন্য হাতে বড় বড় বোঁচকা সামলাইতে সামলাইতে সেই বিপন্ন গৃহ ত্যাগ করিয়া