বলিল, তাই হোক, মানুষের মন যদি চেষ্টা ক’রে ভুলতে পারে, তা হ’লে আমিও ভুলব। তোমাকে আমি ভুলে যাব। এস, আমরা চিরকালের জন্য বিদায় নি।
মাতঙ্গিনীর কণ্ঠস্বরে একটা ভয়াবহ শান্তির ভাব প্রকাশ পাইল।
প্রবল চেষ্টা সত্ত্বেও সে চোখের জল চাপিয়া রাখিতে পারিল না— মাথায় ঘোমটা টানিয়া দিয়া মাধবের কাছে তাহা লুকাইতে চাহিল এবং পরক্ষণেই দ্রুত ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।
দশম পরিচ্ছেদ
প্রত্যাবর্ত্তন
প্রভাত হইতে তখনও ঘণ্টাখানেক বিলম্ব ছিল, বিষাদিত অন্তঃকরণে ও শ্লথ পদক্ষেপে মাতঙ্গিনী আবার সেই কুপথ ধরিয়া ফিরিয়া চলিল, করুণা নিঃশব্দে তাহাকে অনুসরণ করিতে লাগিল। নক্ষত্রখচিত ম্লান নীলাকাশ ততক্ষণে সঞ্চরমান লঘু মেঘখণ্ডে অর্দ্ধেক আবৃত হইয়াছে—ঘন কৃষ্ণ একটা মেঘ দূর দিক্চক্রবালের প্রান্তে ভাসিতেছিল, তাহারই ধূসর ছায়া প্রতিফলিত হওয়াতে দূরে দূরে ছায়ামাত্রে পর্য্যবসিত বৃক্ষচূড়াগুলি গম্ভীরদর্শন মূর্ত্তি ধরিয়াছিল। কৃষ্ণ অরণ্যের উপর দিয়া দিগ্ভ্রান্ত চঞ্চল বাতাস মাঝে মাঝে একটানা একটা অশুভ আর্ত্ত বিলাপধ্বনি সৃষ্টি করিতেছিল; কচিৎ বা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ধরাবক্ষে অথবা ঘনসন্নিবিষ্ট বৃক্ষপত্রের উপর পতিত হইয়া একটা স্বরের সৃষ্টি করিতেছিল। মাতঙ্গিনী নিজের ভাবনায় এমনই ডুবিয়াছিল যে, বহিঃপ্রকৃতির এই রূপ দেখিবার অবকাশ তাহার ছিল না; সে শুধু ইহাই অনুভব করিয়া লইয়াছিল যে তাহার চারিদিকের প্রকৃতি যেন দুঃখভারাক্রান্ত। নিষিদ্ধ অথচ আকাঙ্খিত