।৴৹
‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’ তখন প্রকাশিত হইয়াছে। বিদ্যাসাগরী-রীতি ও আলালী-রীতির পার্থক্য তিনি ধরিতে পারিয়াছেন এবং নিজের অসাধারণ প্রতিভাবলে বুঝিয়াছেন যে, এই দুই রীতির সমন্বয় ব্যতিরেকে বাংলা ভাষার উন্নতি সম্ভব নহে। তিনিই এই সমন্বয়সাধনে সচেষ্ট হইলেন। ‘রাজমোহনের স্ত্রী’র তৎকৃত অনুবাদে এই দুই রীতির দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। বিদ্যাসাগরী-রীতির দৃষ্টান্ত—
এই সর্ব্বাঙ্গসুন্দর রমণীকুসুম মধুমতী তীরজ নহে— ভাগীরথী কূলে রাজধানীসন্নিহিত কোনও স্থানে জাতাও প্রতিপালিতা হইয়া থাকিবেক।—ইত্যাদি। প্রথম পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য। এবং ইহারই পাশে আলালী-রীতির দৃষ্টান্ত—
মথুর। কাজ ত সব জানি।— কাজের মধ্যে নূতন ঘোড়া নূতন গাড়ি—ঠক বেটাদের দোকানে টো টো করা—টাকা উড়ান—তেল পুড়ান—ইংরাজিনবিশ ইয়ার বক্শিকে মদ খাওয়ান—আর হয়ত রসের তরঙ্গে ঢলাঢল। ইত্যাদি। ঐ।
প্রাচীন ও নবীন রীতির এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যজীবনের আদিপর্ব্বের সমাপ্তি এবং যথার্থ বঙ্কিম-প্রতিভার অভ্যুদয়। ‘দুর্গেশনন্দিনী’তে (১৮৬৫) সার্থকভাবে এই ভাষাসমন্বয়ের সূত্রপাত দেখিতে পাই। ‘বঙ্গদর্শনে’র যুগে দেখি বঙ্কিমচন্দ্র তাঁহার পথ খুঁজিয়া পাইয়াছেন।