পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ রাজমোহনের স্ত্রী হচ্ছে যেন মানুষের পায়ের শব্দ, কারা যেন গাছের পাতা মাড়িয়ে চলেছে— করুণা আৰ্ত্তকণ্ঠে বলিল, তাই নাকি ঠাকরুণ ? সে তাহার গতি দ্রুত বাড়াইয়া দিল, দেরি হইলে সে অরণ্যে ইতস্ততবিচরণশীল ডাকাতদের হাতে পড়িতে পারে ভাবিয়া ভয়ে শিহরিয়া উঠিল । কিন্তু তাহাদিগকে বেশিদূর চলিতে হইল না—ক্ৰোধোন্মত্ত বাতাস জাগিয়া উঠিল, বিদ্যুৎ চমকাইতে লাগিল, বজ্রগর্জনে আকাশ মুখর হইল, বৃষ্টির বড় বড় ফোটা পড়িয়া সন্দেহের অবকাশ দিল না । করুণ। বলিল, বৃষ্টিতে ভিজে আজ মরণ হবে দেখছি । গাছতলায় দাড়িয়ে মাথাটা বাচিয়ে নিলে হ’ত না ? মাতঙ্গিনী বলিল, আচ্ছা, তাই চল । বহুবিস্তৃত একটা তেঁতুলগাছের পত্র-শাখার নীচে আশ্রয় লইবার জন্য মাতঙ্গিনী অগ্রসর হইল, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে ক্ষণিক বিদ্যুতালোকে তাহারা দেখিতে পাইল, তাহাদের অনতিদূরে সেই গাছেরই তলায় একটি মনুষ্যমূৰ্ত্তি দাড়াইয়া আছে। করুণা অস্ফুট চীৎকার করিয়া বলিল, পালাও পালাও, এবং উত্তরের অপেক্ষ না করিয়াই প্রাণপণে বিমূঢ় মাতঙ্গিনীর হাত ধরিয়া টানিতে টানিতে ছুটিতে শুরু করিল। ঝড়জলের মধ্য দিয়া ছুটিতে ছুটিতে সে বার বার চীংকার করিতে লাগিল, পালাও পালাও । এবং যতক্ষণে না বাড়ির দরজায় পৌছিল ততক্ষণ উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিতে লাগিল । সৌভাগ্যক্রমে বাড়ি বেশি দূরে ছিল না—তাহারা বাড়িতে আসিয়া পৌঁছিল। বাড়ি পৌছিলে মাতঙ্গিনী বলিল, তুমি ফিরে যাও করুণা। এত রাত্রে তোমাকে ফিরে যেতে বলাটা অন্যায় হচ্ছে বুঝি, কিন্তু তুমি থাকলে বিপদের ভয় আরও বেশি । তার চাইতে এক কাজ কর, কনকদের বাড়ি যাও, তাদের বারান্দায় গিয়ে শুয়ে থাক, ঝড়টা একটু থামলে, একটু ফরসা হ’লেই ওদের বাড়ির কেউ জাগবার আগেই তুমি চলে যেও ।