লইয়াছিল, কথায় তেমনই জোর দিয়া সে বলিল, অসম্ভব, এ জীবনে আর সেখানে যেতে পারি না।
মাতঙ্গিনীর ভাবভঙ্গী দেখিয়া কনক আর প্রতিবাদ করিতে সাহস করিল না। সে আঁচলে মুখ ঢাকিয়া কাঁদিতে লাগিল।
হঠাৎ পিছন হইতে কে বলিয়া উঠিল, আরে বেটীরা, এগানে লুকিয়ে লুকিয়ে কি পরামর্শ হচ্ছে শুনি! আহা, তোমরা কাঁদছ, কেন, কি হয়েছে মা?
ভয়চকিত সখীদের পাশে আসিয়া যে দাঁড়াইল সে একজন শ্যামাঙ্গী প্রৌঢ়া রমণী। তাহার চুলে পাক ধরিয়াছে। দেহ বার্দ্ধক্যবশত কুঞ্চিত হইতে শুরু হইয়াছে। তাহার পরনে একটা মোটা পরিষ্কার ঠেঁটি, মুখ তৈলাক্ত, কাঁধে মলিন গামছা এবং কোমরের খালি কলসি তাহার সেখানে আগমনের কারণ বলিয়া দিতেছিল।
কনক একমুহূর্ত্তে চোখের জল ভুলিয়া গেল, হাস্যোজ্জ্ব্ল-মুখে সে বলিয়া উঠিল, আরে, এ যে দেখছি, সুকীর মা। হ্যাঁ সুকীর মা, ফুলপুকরে আজ যে বড় হঠাৎ এলে?
সুকীর মা অত্যন্ত প্রসন্নভাবে উত্তর দিল, উঠতে আজ বড় বেলা হয়ে গেল মা, ভাবলাম, যাই, ঘরের কাজে হাত দেবার আগে চট্ করে একট ডুব দিয়ে আসি। কিন্তু, বাছা তোদের কি হয়েছে বল্ তো? দুজনেই কাঁদছিস কেন?
কনকের চোখ দুইটি আবার অশ্রুসজল হইয়া উঠিল, সে বলিল, আর বলো না, সুকীর মা! এ হতভাগীর দুঃখের কথা তোমাকে আর কি বলব! মাতঙ্গিনী নীরব অর্থপূর্ণ দৃষ্টি প্রেরণ করিয়া কনককে সাবধান করিয়া দিল—সেই দৃষ্টি যেন বলিল, আমার দুঃখের কথা যাহাকে তাহাকে বলিবার নয়, কিছু প্রকাশ করি ও না। কনকও তেমনই অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে জবাব দিল, ভয় নাই, তোমার গুপ্তকথা ব্যক্ত হইবে না।