আবার বিয়ে করবে? বলি, এমন সোনার চাঁদের মত বউ কোথায় পাবে সে? আর একটা কচি মেয়েকে ঘরে আনলেই সে কি ঘরগেরস্থালী সামলাতে পারবে? না মা, তুমি ঘরে ফিরো না, বরঞ্চ তোমার বোনের ঘরে গিয়ে দেখ ও কি করে।
কনক বলিল, তাই কি হবার জো আছে সুকীর মা, বোনের ঘরে যাওয়ার মুখও ওর নাই। মাতঙ্গিনী লজ্জায় ও ঘৃণায় অধোবদন হইয়া রহিল। কনক বলিতে লাগিল, মাধববাবু তাদের বাড়িতে গেল শ্রাদ্ধের সময় রাজুদাকে নেমন্তন্ন করে নি বলে ও ওর বোনের সঙ্গে কি কম ঝগড়াটাই করেছে! আমাদের বাড়িতেই ওকে রাখতে পারতাম, কিন্তু জানই তো সুকীর মা, আমরা কত গরিব। ওকে নিয়ে যাব, আর ও উপোস করে মরবে। এটাই কি ভাল?
সুকীর মা কপালে করাঘাত করিয়া বলিল, মরণ! কি বোকা মেয়ে তুমি বাছা। অমন স্বামীর জন্যে বোনের সঙ্গে ঝগড়া করা! হ’ত আমার জামাই—আমি কি শুধু তাকেই কথা শোনাতাম! তার বা মারও কি রক্ষে থাকত নাকি? মরুকগে, আয় মা, তুই আমার সঙ্গে। বিপন্ন ও স্তব্ধ মাতঙ্গিনীর দিকে ফিরিয়া সে বলিল, আমার সঙ্গে এসো, আমাদের গিন্নীর সঙ্গে যতদিন খুশি তুমি থাক্বে। বড় ঠাকরুণ তোমাকে বড্ড ভালবাসেন, তোমাকে পেলে তিনি খুশিই হবেন। তারপর তোমার স্বামীর রাগ পড়লে, তা সে শিগগিরই পড়বে, তোমাকে বাড়িতে যেতে সাধাসাধি করলে তবে তুমি যেয়ো। দেখো, যেন চট করে আবার তার কথায় ভুলে যেয়ো না; নাকের জলে চোখের জলে হয়ে দাঁতে খড় কেটে সে তোমাকে নিয়ে যাবে, তবে যাবে তুমি।
কনকের আনন্দ আর ধরে না, উল্লসিত হইয়া সে বলিয়া উঠিল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক বলেছ সুকীর মা, ও তোমার সঙ্গেই এখন যাক। কি বলিস দিদি? সুকীর মায়ের সঙ্গে যাওয়াটাই কি সব চাইতে ভাল হবে না?