ছিল, সেই সেই স্থান একেবারে কালো হইয়া গিয়াছে। হল-ঘর হইতে অন্দর-মহলে যাইতে হইলে গোলকধাঁধার মত অন্ধকার ও স্যাৎসেতে অনেকগুলি কামরা পার হইয়া যাইতে হয়। অন্দরমহলটা চকমিলান বাড়ি; মধ্যস্থলে প্রাঙ্গণ এবং প্রাঙ্গণের চারিপাশে পূর্ব্বের মতই বারান্দা। চুনবালির কাজ এখানেও আছে, কিন্তু অধিকাংশ থামের নগ্নমূর্ত্তি কালের প্রকোপে প্রকট হইয়া পড়িয়াছে। বাড়ির শিশুরাও এই কার্য্যে কম সহায়তা করে নাই। উপরের এবং নীচের সকল ঘরের দেওয়ালেই অসংখ্য লাল সাদা কালো সবুজ চিহ্ন, এক কথায় রামধনুর সাতরঙে রঙিন। অতিরিক্ত পান খাওয়ার ফলে রসস্থ মুখের ভার-লাঘবকারী পিচে, অথবা চিন্তালেশচীন কোনও দাসীর কর্দ্দম-আধারের ভার সহিতে না পারিয়া গোলা–হাঁড়ি ভাঙিয়া ফেলিবার ফলে অথবা পানসাজা রূপ সুখকর কাজের ভার যাহার উপর,দেওয়ালকে তোয়ালে ভাবে ব্যবহার করিয়া তাহার কাজের পরিচয় অঙ্গুলিচিহ্নরূপে ঘন ঘন দেওয়ালের গায়ে মুদ্রিত করিয়া দিবার জন্যই এরূপ হইয়াছে। কয়লার সাহায্যে অঙ্কিত বহু চিত্র, এঞ্জেলোর কল্পনা অথবা গুইডোর বর্ণগৌরব না থাকিলে ও দুষ্ট বালকদের সময় নষ্ট করিবার অথবা বুদ্ধিমতী বালিকাদের ক্ষুধিত প্রহরযাপনের প্রচেষ্টার সাক্ষ্যরূপে বর্ত্তমান ছিল! উঠানে ইট বা টালির বালাই ছিল না, জননী বসুন্ধরা সকল প্রকার উদ্ভিজ্জগৌরবে শোভমানা ছিলেন। গৌরবটা বেশি ছিল চারিটি কোণে। উঠানের মাঝগানে এদিক ওদিক চারিদিকে যাওয়ার পথ। সংসারের মত আবর্জ্জনা আর ময়লা জল মিলিয়া ঘন কালো হইয়া উঠানের একদিকে যেন যুগ যুগ ধরিয়া বিশ্রাম করিতেছে—সে কালোর তুলনা নাই।
এখান হইতে একটা সঙ্কীর্ণ গলিপথ দিয়া অপরিসর অথচ দৃঢ় একটি দরজা পার হইলেই বাড়ির তৃতীয় মহল। এখানেই রান্নাঘর, দুই দিকে সারি সারি একতলা কতকগুলি কুঠরি, মধ্যে বিস্তৃত প্রাঙ্গণ, উদ্ভিজ্জগৌরবে