বিল্বন ঠাকুর তাহাকে নাড়িয়া-চাড়িয়া, কোলে লইয়া, আকাশে তুলিয়া, ভূমিতে নামাইয়া, অস্থির করিয়া তুলিলেন; উচ্চৈঃস্বরে ও দ্রুত উচ্চারণে বলিলেন, “শোনো শোনো ধ্রুব, শোনো, তোমাকে শ্লোক বলি শোনো–
কলহ কটকটাং কাঠ কাঠিন্য কাঠ্যং
কটন কিটন কীটং কুট্মলং খট্টমট্টং।
অর্থাৎ কি না, যে ছেলে কাঁদে তাকে কলহ কট্কটাঙের মধ্যে পুরে খুব করে কাঠ কাঠিন্য কাঠ্যং দিতে হয়, তার পরে এতগুলো কটন কিটন কিটং নিয়ে একেবারে তিন দিন ধরে কুট্মলং খট্টমট্টং।”
পুরোহিত ঠাকুর এইরূপ অনর্গল বকিয়া গেলেন। ধ্রুবের ক্রন্দন অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই একেবারে লুপ্ত হইয়া গেল। সে প্রথমে গোলমালে বিব্রত ও অবাক হইয়া বিল্বন ঠাকুরের মুখের দিকে সজল চক্ষু তুলিয়া চাহিয়া রহিল। তার পরে তাঁর হাতমুখ নাড়া দেখিয়া তাহার অত্যন্ত কৌতুক বোধ হইল।
সে ভারি খুশি হইয়া বলিল, “আবার বলো।”
পুরোহিত আবার বকিয়া গেলেন। ধ্রুব অত্যন্ত হাসিতে হাসিতে বলিল, “আবার বলো।”
রাজা ধ্রুবের অশ্রুসিক্ত কপোলে এবং হাসিভরা অধরে বার বার চুম্বন করিলেন। তখন রাজা রাজপুরোহিত ও দুটি ছেলেমেয়ে মিলিয়া খেলা পড়িয়া গেল।
বিল্বন ঠাকুর রাজাকে কহিলেন, “মহারাজ ইহাদের লইয়া বেশ আছেন। দিনরাত প্রখর বুদ্ধিমানদের সঙ্গে থাকিলে বুদ্ধি লোপ পায়। ছুরিতে অবিশ্রাম শান পড়িলে ছুরি ক্রমেই সূক্ষ্ম হইয়া অন্তর্ধান করে। একটা মোটা বাঁট কেবল অবশিষ্ট থাকে।”
রাজা হাসিয়া কহিলেন, “এখনো তবে বোধ করি আমার সূক্ষ্ম বুদ্ধির লক্ষণ প্রকাশ পায় নাই?”