নক্ষত্ররায় পুরোহিতের মুখের দিকে চাহিলেন—ভাবটা এই যে, এ কথার একটা উত্তর দেওয়া আবশ্যক।
রঘুপতি আগুন হইয়া উঠিয়া বলিলেন, “মহারাজ, আপনি পাষণ্ড নাস্তিকের মতো কথা কহিতেছেন।”
নক্ষত্ররায় মৃদু প্রতিধ্বনির মতো বলিলেন, “হাঁ, নাস্তিকের মতো কথা কহিতেছেন।”
গোবিন্দমাণিক্য উদ্দীপ্তমূর্তি পুরোহিতের মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “ঠাকুর, রাজসভায় বসিয়া আপনি মিথ্যা সময় নষ্ট করিতেছেন। মন্দিরের কাজ বহিয়া যাইতেছে, আপনি মন্দিরে যান। যাইবার সময় পথে প্রচার করিয়া দিবেন যে, আমার রাজ্যে যে ব্যক্তি দেবতার নিকট জীববলি দিবে তাহার নির্বাসনদণ্ড হইবে।”
তখন রঘুপতি কাঁপিতে কাঁপিতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া পইতা স্পর্শ করিয়া বলিলেন, “তবে তুমি উচ্ছন্ন যাও!” চারি দিক হইতে হাঁ হাঁ করিয়া সভাসদ্গণ পুরোহিতের উপর গিয়া পড়িলেন। রাজা ইঙ্গিতে সকলকে নিষেধ করিলেন, সকলে সরিয়া দাঁড়াইলেন। রঘুপতি বলিতে লাগিলেন, “তুমি রাজা, তুমি ইচ্ছা করিলে প্রজার সর্বস্ব হরণ করিতে পারো, তাই বলিয়া তুমি মায়ের বলি হরণ করিবে! বটে! কী তোমার সাধ্য! আমি রঘুপতি মায়ের সেবক থাকিতে কেমন তুমি পূজার ব্যাঘাত কর দেখিব।”
মন্ত্রী রাজার স্বভাব বিলক্ষণ অবগত আছেন। তিনি জানেন, সংকল্প হইতে রাজাকে শীঘ্র বিচলিত করা যায় না। তিনি ধীরে ধীরে সভয়ে কহিলেন, “মহারাজ, আপনার স্বর্গীয় পিতৃপুরুষগণ বরাবর দেবীর নিকটে নিয়মিত বলি দিয়া আসিতেছেন। কখনো একদিনের জন্য ইহার অন্যথা হয় নাই।”
মন্ত্রী থামিলেন। রাজা চুপ করিয়া রহিলেন। মন্ত্রী বলিলেন, “আজ এতদিন পরে আপনার পিতৃপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত সেই প্রাচীন পূজার