অনেকক্ষণ সে ঘরে প্রবেশ করিতে পারিলেন না, মনে ভয় হইতে লাগিল পাছে গিয়া দেখেন জয়সিংহ সেখানে নাই।
অবশেষে যখন গোধূলির ঈষৎ অন্ধকারে বনের ছায়া গাঢ়তর ছায়ায় মিলাইয়া গেল তখন রঘুপতি ধীরে ধীরে জয়সিংহের গৃহে প্রবেশ করিলেন– শূন্য বিজন গৃহ সমাধিভবনের মতো নিস্তব্ধ। ঘরের মধ্যে এক পাশে একটি কাঠের সিন্দুক এবং সিন্দুকের পার্শ্বে জয়সিংহের একজোড়া খড়ম ধূলিমলিন হইয়া পড়িয়া আছে। ভিত্তিতে জয়সিংহের স্বহস্তে আঁকা কালীমূর্তি। ঘরের পূর্বকোণে একটি ধাতুপ্রদীপ ধাতু-আধারের উপর দাঁড়াইয়া আছে, গত বৎসর হইতে সে প্রদীপ কেহ জ্বালায় নাই– মাকড়সার জালে সে আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে। নিকটবর্তী দেয়ালে প্রদীপশিখার কালো দাগ পড়িয়া আছে। গৃহে পূর্বোক্ত কয়েকটি দ্রব্য ছাড়া আর কিছুই নাই। রঘুপতি গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন। সে নিশ্বাস শূন্য গৃহে ধ্বনিত হইয়া উঠিল। ক্রমে অন্ধকারে আর কিছুই দেখা যায় না। একটা টিকটিকি মাঝে মাঝে কেবল টিকটিক শব্দ করিতে লাগিল। মুক্ত দ্বার দিয়া ঘরের মধ্যে শীতের বায়ু প্রবেশ করিতে লাগিল। রঘুপতি সিন্দুকের উপরে বসিয়া কাঁপিতে লাগিলেন।
এইরূপে এক মাস এই বিজন মন্দিরে কাটাইলেন, কিন্তু এমন করিয়া আর দিন কাটে না। পৌরোহিত্য ছাড়িতে হইল। রাজসভায় গেলেন। রাজ্যশাসনকার্যে হস্তক্ষেপ করিলেন। দেখিলেন, অবিচার উৎপীড়ন ও বিশৃঙ্খলা ছত্রমাণিক্য নাম ধরিয়া রাজত্ব করিতেছে। তিনি রাজ্যে শৃঙ্খলা-স্থাপনের চেষ্টা করিলেন। ছত্রমাণিক্যকে পরামর্শ দিতে গেলেন।
ছত্রমাণিক্য চটিয়া উঠিয়া বলিলেন, “ঠাকুর, রাজ্যশাসনকার্যের তুমি কী জানো? এ-সব বিষয় তুমি কিছু বোঝ না।”
রঘুপতি রাজার প্রতাপ দেখিয়া অবাক হইয়া গেলেন। দেখিলেন,