আমি আমার হীনত্ব স্বীকার করিয়া তাহার নিকট একবার মার্জনা প্রার্থনা করি। জয়সিংহ যখন যাহা যাহ। বসিয়াছে করিয়াছে, সমস্ত তাহার মনে পড়িতে লাগল॥ জয়সিংহের সমস্ত জীবন সংহত ভাবে তাহার মধ্যে বিরাজ করিতে লাগিল। তিনি এইরূপ একটি মহৎ চরিত্রের মধ্যে আত্মবিশ্বত হুইয়া সমস্ত। বিবাদ বিদ্বেষ তুলিয়া গেলেন। চারি দিকের গুরুভার সংসার লঘু হইয়া গিয়া তাহাকে পীড়ন করিতে বিরত হইল। যে নক্ষত্রমাণিক্যকে তিনিই রাজ্য করিয়া দিয়াছেন সে যে রাজা হইয়া তাহাকেই অপমান করিয়াছে ইহা স্মরণ করিয়া তাহার কিছুমাত্র রোষ। জন্মিল না। এই মান-অপমান সমস্তই সামা্য মনে করিয়া তাRার ঈষৎ হাসি আসিল। কেবল তাঁহার ইচ্ছা করিতে লাগিল, জয়সিংহ যাহাতে যথার্থ সন্তুষ্ট হয় এমন একটাকিছু কাজ করেন॥ অথচ চতুদিকে কাজ কিছুই দেখিতে পাইলেন না— চতুর্দিকে শূন্ত হাহাকার করিতেছে। এই বিজন মন্দির 'হা!কে যেন চাপিয়া ধরিল, তাঁহার যেন নিশ্বাস রোধ করিল। একটাকিছু বৃৎ কাজ করিয়া তিনি হৃদয়বেদনা শাস্ত করিয়া রাখিবেন, কিন্তু এই-সকল নিস্তব্ধ নিরুদ্যম নিরালয় মন্দিরের দিকে চাহিয়া পিঞ্জরবদ্ধ পাখির মতো তাহার হৃদয় অধীর হইয়া উঠিল। তিনি উঠিয় বনের মধ্যে অধীর ভাবে পদচারণ করিতে লাগিলেন। মন্দিরের ভিতরকার অলস অচেতন অকৰ্মণ্য জড়প্রতিমাগুলির প্রতি তাহার অতিশয় স্থণার উদয় হইল। হৃদয় যখন বেগে উন্দুবেল হইয়া উঠিয়াছে তখন কতকগুলি নিরুদাম ঘূল পাসাণমূতির নিরুম সহচর হইয়া চিরদিন অতিবাহিত করতাহার নিকটে অতাও হেয় বলিয়া বোধ হইল। যখন রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর হইল, রঘুপতি চকমকি পুঁকিয়া একটি প্রদীপ জালাইলেন। দীপ-হস্তে চতুর্দশ দেবতার মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করিলেন। গিয়া দেখিলেন, চতুর্দশ দেবতা সমান ভাবেই দাড়াইয়া আছে; গত বৎসর আষাঢ়ের কালরাত্রে ক্ষীণ দীপালোকে ভক্তের মৃতদেহের সম্মুখে রক্ত
পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।