পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়িয়াছে, উহাদিগকে আর কিছুকাল বিশ্রাম করিতে দিলে ভালো হয়।”

বালকেরা কিছু বিরক্ত হইল– তাহাদের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠটি ফকিরের দিকে চাহিয়া কহিল, “আমরা কিছু নিতান্ত শিশু না, যখন আবশ্যক তখন অনায়াসে কষ্ট সহ্য করিতে পারি।”

গোবিন্দমাণিক্যের নিকট হইতে তাহারা স্নেহ গ্রহণ করিতে প্রস্তুত নহে। গোবিন্দমাণিক্য আর কিছু বলিলেন না।

ফকির যখন যাত্রার উদ্‌‍যোগ করিতেছেন, এমন সময়ে দুর্গে আর-একজন অতিথি আগমন করিলেন। তাঁহাকে দেখিয়া রাজা ও ফকির উভয়ে আশ্চর্য হইয়া গেলেন। ফকির কী করিবেন ভাবিয়া পাইলেন না। রাজা তাঁহার অতিথিকে প্রণাম করিলেন। অতিথি আর কেহ নহেন, রঘুপতি। রঘুপতি রাজার প্রণাম গ্রহণ করিয়া কহিলেন, “জয় হউক।” রাজা কিঞ্চিৎ ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “নক্ষত্রের নিকট হইতে আসিতেছ ঠাকুর? বিশেষ কোনো সংবাদ আছে?”

রঘুপতি কহিলেন, “নক্ষত্ররায় ভালো আছেন, তাঁহার জন্য ভাবিবেন না।”

আকাশের দিকে হাত তুলিয়া কহিলেন, “আমাকে জয়সিংহ তোমার কাছে পাঠাইয়া দিয়াছে। সে বাঁচিয়া নাই। তাহার ইচ্ছা আমি সাধন করিব, নহিলে আমার শান্তি নাই। তোমার কাছে থাকিয়া তোমার সঙ্গী হইয়া তোমার সকল কার্যে আমি যোগ দিব।”

রাজা প্রথমে রঘুপতির ভাব কিছু বুঝিতে পারিলেন না। তিনি একবার মনে করিলেন, রঘুপতি বুঝি পাগল হইয়া থাকিবেন। রাজা চুপ করিয়া রহিলেন।

রঘুপতি কহিলেন, “আমি সমস্ত দেখিয়াছি, কিছুতেই সুখ নাই। হিংসা করিয়া সুখ নাই, আধিপত্য করিয়া সুখ নাই, তুমি যে পথ অবলম্বন করিয়াছ তাহাতেই সুখ। আমি তোমার পরম শত্রুতা করিয়াছি, আমি