গোবিন্দমাণিক্যের প্রতি দেবীর অসন্তোষ হইয়াছে, অসন্তোষের সম্পূর্ণ কারণও জন্মিয়াছে। অতএব দেবী যখন রাজরক্ত চাহিয়াছেন তখন বুঝিতে হইবে, তাহা গোবিন্দমাণিক্যেরই রক্ত।”
জয়সিংহ কহিলেন, “তা যদি সত্য হয়, তবে আমিই রাজরক্ত আনিব—নক্ষত্ররায়কে পাপে লিপ্ত করিব না।
রঘুপতি কহিলেন, “দেবীর আদেশ পালন করিতে কোনো পাপ নাই।”
জয়সিংহ। পুণ্য আছে তো প্রভু। সে পুণ্য আমিই উপার্জন করিব।
রঘুপতি কহিলেন, “তবে সত্য করিয়া বলি বৎস। আমি তোমাকে শিশুকাল হইতে পুত্রের অধিক যত্নে প্রাণের অধিক ভালোবাসিয়া পালন করিয়া আসিয়াছি, আমি তোমাকে হারাইতে পারিব না। নক্ষত্ররায় যদি গোবিন্দমাণিক্যকে বধ করিয়া রাজা হয়, তবে কেহ তাহাতে একটি কথা কহিবে না, কিন্তু তুমি যদি রাজার গায়ে হাত তোল তো তোমাকে আর আমি ফিরিয়া পাইব না।”
জয়সিংহ কহিলেন, “আমার স্নেহে— পিতা, আমি অপদার্থ— আমার স্নেহে তুমি একটি পিপীলিকারও হানি করিতে পারিবে না। আমার প্রতি স্নেহে তুমি যদি পাপে লিপ্ত হও তবে তোমার সে স্নেহ আমি বেশিদিন ভোগ করিতে পারিব না, সে স্নেহের পরিণাম কখনোই ভালো হইবে না।”
রঘুপতি তাড়াতাড়ি কহিলেন— আচ্ছা, আচ্ছা, সে কথা পরে হইবে। কাল নক্ষত্ররায় আসিলে যা হয় একটা ব্যবস্থা হইবে।”
জয়সিংহ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিলেন, “আমিই রাজরক্ত আনিব। মায়ের নামে গুরুদেবের নামে ভ্রাতৃহত্যা ঘটিতে দিব না।”