পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজর্ষি
২৯

রাজপথে গিয়া দাঁড়ান। সেখানে অনন্ত সুনীল আকাশচন্দ্রাতপের নিম্নস্থিত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মহাসভা দেখিতে পাওয়া যায়; সেখানে ভূলোক ভুবর্লোক স্বর্লোক সপ্তলোকের সংগীতের আভাস শুনা যায়; সেখানে সরলপথে সকলই সরল সহজ শোভন বলিয়া বোধ হয়, কেবলই অগ্রসর হইতে উৎসাহ হয়— উৎকট ভাবনা-চিন্তা অসুখ-অশান্তি দূর হইয়া যায়। মহারাজ সেই প্রভাতে, নির্জনে বনের মধ্যে নদীর তীরে, মুক্ত আকাশে একটি শিশুর প্রেমে নিমগ্ন হইয়া অসীম প্রেমসমুদ্রের পথ দেখিতে পান।

 গোবিন্দমাণিক্য ধ্রুবকে কোলে করিয়া লইয়া তাহাকে ধ্রুবোপাখ্যান শুনাইতেছেন; সে যে বড়ো একটা কিছু বুঝিতেছে তাহা নহে— কিন্তু রাজার ইচ্ছা ধ্রুবের মুখে আধো-আধো স্বরে এই ধ্রুবোপাখ্যান আবার ফিরিয়া শুনেন।

 গল্প শুনিতে শুনিতে ধ্রুব বলিল, “আমি বনে যাব।”

 রাজা বলিলেন, “কী করতে বনে যাবে?”

 ধ্রুব বলিল, “হয়িকে দেখতে যাব।”

 রাজা বলিলেন, “আমরা তো বনে এসেছি, হরিকে দেখতে এসেছি।”

 ধ্রুব। হয়ি কোথায়?

 রাজা। এইখানেই আছেন।

 ধ্রুব কহিল, “দিদি কোথায়?”

 বলিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া পিছনে চাহিয়া দেখিল; তাহার মনে হইল, দিদি যেন আগেকার মতো পিছন হইতে সহসা তাহার চোখ টিপিবার জন্য আসিতেছে। কাহাকেও না পাইয়া ঘাড় নামাইয়া চোখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “দিদি কোথায়?”

 রাজা কহিলেন, “হরি তোমার দিদিকে ডেকে নিয়েছেন।”

 ধ্রুব কহিল, “হয়ি কোথায়?”

 রাজা কহিলেন, “তাঁকে ডাকো বৎস। তোমাকে সেই যে শ্লোক শিখিয়ে দিয়েছিলাম সেইটে বলো।”