পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫২
রাজর্ষি

হইতে ‘র’ অক্ষর একেবারে সমূলে লোপ করিয়া দিয়াও ধ্রুবের মনে কিছুমাত্র অনুতাপের উদয় হইল না। রাজার মুখের সামনে রাজাকে আজা বলিয়া সে সম্পূর্ণ আত্মপ্রসাদ লাভ করিল।

 রাজা ধ্রুবের এই ধৃষ্টতা সহ্য করিতে না পারিয়া বলিলেন, “তুমি আজা।”

 ধ্রুব বলিল, “তুমি আজা।”

 এ বিষয়ে তর্কের শেষ হইল না। কোনো পক্ষে কোনো প্রমাণ নাই, তর্ক কেবলই গায়ের জোরে। অবশেষে রাজা নিজের মুকুট লইয়া ধ্রুবের মাথায় চড়াইয়া দিলেন। তখন ধ্রুবের আর কথাটি কহিবার জো রহিল না, সম্পূর্ণ হার হইল— ধ্রুবের মুখের আধখানা সেই মুকুটের নীচে ডুবিয়া গেল। মুকুট-সমেত মস্ত মাথা দুলাইয়া ধ্রুব মুকুট-হীন রাজার প্রতি আদেশ করিল, “একটা গল্প বলো।”

 রাজা বলিলেন, “কী গল্প বলিব।”

 ধ্রুব কহিল, “দিদির গল্প বলো।” গল্পমাত্রকেই ধ্রুব দিদির গল্প বলিয়া জানিত। সে জানিত, দিদি যে-সকল গল্প বলিত তাহা ছাড়া পৃথিবীতে আর গল্প নাই।

 রাজা তখন মস্ত এক পৌরাণিক গল্প ফাঁদিয়া বসিলেন। তিনি বলিতে লাগিলেন, “হিরণ্যকশিপু নামে এক রাজা ছিল।”

 রাজা শুনিয়া ধ্রুব বলিয়া উঠিল, “আমি আজা।” মস্ত ঢিলে মুকুটের জোরে হিরণ্যকশিপুর রাজপদ সে একেবারে অগ্রাহ্য করিল।

 চাটুভাষী সভাসদের ন্যায় গোবিন্দমাণিক্য সেই কিরীটী শিশুকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য বলিলেন, “তুমিও আজা, সেও আজা।”

 ধ্রুব তাহাতেও সুস্পষ্ট অসম্মতি প্রকাশ করিয়া বলিল, “না, আমি আজা।”

 অবশেষে মহারাজ যখন বলিলেন, “হিরণ্যকশিপু আজা নয়, সে আক্কস”, তখন ধ্রুব তাহাতে আপত্তি করিবার কিছুই দেখিল না।