পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজর্ষি
৫৩

 এমন সময় নক্ষত্ররায় গৃহে প্রবেশ করিলেন; কহিলেন, “শুনিলাম রাজকার্যোপলক্ষে মহারাজ আমাকে ডাকিয়াছেন। আদেশের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছি।”

 রাজা কহিলেন, “আর-একটু অপেক্ষা করো, গল্পটা শেষ করিয়া লই।” বলিয়া গল্পটা সমস্ত শেষ করিলেন। “আক্কস দুষ্টু”— গল্প শুনিয়া সংক্ষেপে ধ্রুব এইরূপ মত প্রকাশ করিল।

 ধ্রুবের মাথায় মুকুট দেখিয়া নক্ষত্ররায়ের ভালো লাগে নাই। ধ্রুব যখন দেখিল নক্ষত্ররায়ের দৃষ্টি তাহার দিকে স্থাপিত রহিয়াছে, তখন সে নক্ষত্ররায়কে গম্ভীরভাবে জানাইয়া দিল, “আমি আজা।”

 নক্ষত্র বলিলেন, “ছি, ও কথা বলিতে নাই।” বলিয়া ধ্রুবের মাথা হইতে মুকুট তুলিয়া লইয়া রাজার হাতে দিতে উদ্যত হইলেন। ধ্রুব মুকুটহরণের সম্ভাবনা দেখিয়া সত্যকার রাজাদের মতো চীৎকার করিয়া উঠিল। গোবিন্দমাণিক্য তাহাকে এই আসন্ন বিপদ হইতে উদ্ধার করিলেন, নক্ষত্রকে নিবারণ করিলেন।

 অবশেষে গোবিন্দমাণিক্য নক্ষত্ররায়কে কহিলেন, “শুনিয়াছি রঘুপতি ঠাকুর অসৎ উপায়ে প্রজাদের অসন্তোষ উদ্রেক করিয়া দিতেছেন। তুমি স্বয়ং নগরের মধ্যে গিয়া এ বিষয়ে তদারক করিয়া আসিবে এবং সত্য মিথ্যা অবধারণ করিয়া আমাকে জানাইবে।”

 নক্ষত্ররায় কহিলেন, “যে আজ্ঞে।” বলিয়া চলিয়া গেলেন— কিন্তু ধ্রুবের মাথায় মুকুট তাঁহার কিছুতেই ভালো লাগিল না।

 প্রহরী আসিয়া কহিল, “পুরোহিত-ঠাকুরের সেবক জয়সিংহ সাক্ষাৎ-প্রার্থনায় দ্বারে দাঁড়াইয়া।”

 রাজা তাহাকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন।

 জয়সিংহ মহারাজকে প্রণাম করিয়া করজোড়ে কহিলেন, “মহারাজ, আমি বহুদূরদেশে চলিয়া যাইতেছি। আপনি আমার রাজা, আমার গুরু,