আপনার আশীর্বাদ লইতে আসিয়াছি।”
রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথায় যাইবে জয়সিংহ?”
জয়সিংহ কহিলেন, “জানি না মহারাজ, কোথায় তাহা কেহ বলিতে পারে না।” রাজাকে কথা কহিতে উদ্যত দেখিয়া জয়সিংহ কহিলেন, “নিষেধ করিবেন না মহারাজ। আপনি নিষেধ করিলে আমার যাত্রা শুভ হইবে না। আশীর্বাদ করুন, এখানে আবার যে-সকল সংশয় ছিল, সেখানে যেন সে-সকল সংশয় দূর হইয়া যায়। এখানকার মেঘ সেখানে যেন কাটিয়া যায়। যেন আপনার মতো রাজার রাজত্বে যাই, যেন শান্তি পাই।”
রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কবে যাইবে?”
জয়সিংহ কহিলেন, “আজ সন্ধ্যাকালে। অধিক সময় নাই মহারাজ, আজ আমি তবে বিদায় হই।” বলিয়া রাজাকে প্রণাম করিয়া রাজার পদধূলি লইলেন, রাজার চরণে দুই ফোঁটা অশ্রু পড়িল।
জয়সিংহ উঠিয়া যখন যাইতে উদ্যত হইলেন তখন ধ্রুব ধীরে ধীরে গিয়া তাঁহার কাপড় টানিয়া কহিল, “তুমি যেয়ো না।”
জয়সিংহ হাসিয়া ফিরিয়া দাঁড়াইলেন, ধ্রুবকে কোলে তুলিয়া লইয়া তাহাকে চুম্বন করিয়া কহিলেন, “কার কাছে থাকিব বৎস? আমার কে আছে?”
ধ্রুব কহিল, “আমি আজা।”
জয়সিংহ কহিলেন, “তোমরা রাজার রাজা, তোমরাই সকলকে বন্দী করিয়া রাখিয়াছ।” ধ্রবকে কোল হইতে নামাইয়া জয়সিংহ গৃহ হইতে বাহির হইয়া গেলেন। মহারাজ গম্ভীরমুখে অনেকক্ষণ ধরিয়া ভাবিতে লাগিলেন।