পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তোলা হইল। আজ মাঝে মাঝে দুর্গের মধ্যে গোলাগুলি আসিয়া পড়িতে লাগিল, দুই-চারিজন করিয়া দুর্গ-সৈন্য হত ও আহত হইতে লাগিল।

“ঠাকুর, কিছু ভয় নাই, এ কেবল খেলা হইতেছে” বলিয়া খুড়াসাহেব রঘুপতিকে লইয়া দুর্গের চারি দিক দেখাইয়া বেড়াইতে লাগিলেন। কোথায় অস্ত্রাগার, কোথায় ভাণ্ডার কোথায় আহতদের চিকিৎসাগৃহ, কোথায় বন্দীশালা, কোথায় দরবার, এই-সমস্ত তন্ন তন্ন করিয়া দেখাইতে লাগিলেন ও বার বার রঘুপতির মুখের দিকে চাহিতে লাগিলেন। রঘুপতি কহিলেন, “চমৎকার কারখানা। ত্রিপুরার গড় ইহার কাছে লাগিতে পারে না। কিন্তু সাহেব, গোপনে পলায়নের জন্য ত্রিপুরার গড়ে একটি আশ্চর্য সুরঙ্গ-পথ আছে, এখানে সেরূপ কিছুই দেখিতেছি না।”

খুড়াসাহেব কী একটা বলিতে যাইতেছিলেন, সহসা আত্মসম্বরণ করিয়া কহিলেন, “না, এ দুর্গে সেরূপ কিছুই নাই।”

রঘুপতি নিতান্ত আশ্চর্য প্রকাশ করিয়া কহিলেন, “এতবড়ো দুর্গে একটা সুরঙ্গ-পথ নাই, এ কেমন কথা হইল!”

খুড়াসাহেব কিছু কাতর হইয়া কহিলেন, “নাই, এ কি হতে পারে? অবশ্যই আছে, তবে আমরা হয়তো কেহ জানি না।”

রঘুপতি হাসিয়া কহিলেন, “তবে তো না থাকারই মধ্যে। যখন আপনিই জানেন না তখন আর কেই বা জানে।”

খুড়াসাহেব অত্যন্ত গম্ভীর হইয়া কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন, তার পরে সহসা “হরি হে রাম রাম” বলিয়া তুড়ি দিয়া হাই তুলিলেন, তার পরে মুখে গোঁফে দাড়িতে দুই-একবার হাত বুলাইয়া হঠাৎ বলিলেন, “ঠাকুর, পূজা-অর্চনা লইয়া থাকেন, আপনাকে বলিতে কোনো দোষ নাই– দুর্গ-প্রবেশের এবং দুর্গ হইতে বাহির হইবার দুইটা গোপন পথ আছে কিন্তু বাহিরের কোনো লোককে তা দেখানো নিষেধ।”