সুচেতসিংহকে লইয়া প্রায় সমস্ত দিন দুর্গ পর্যবেক্ষণ করিলেন। সুচেতসিংহ যেখানে কোনোপ্রকার আশ্চর্য প্রকাশ না করেন সেখানে খুড়াসাহেব স্বয়ং “বাহবা বাহবা” করিয়া নিজের উৎসাহ রাজপুত বীরের হৃদয়ে সঞ্চারিত করিতে চেষ্টা করেন। বিশেষত দুর্গপ্রাকারের গাঁথুনি সম্বন্ধে তাঁহাকে সবিশেষ পরিশ্রম করিতে হইল। দুর্গপ্রাকার যেরূপ অবিচলিত, সুচেতসিংহও ততোধিক– তাঁহার মুখে কোনোপ্রকারই ভাব প্রকাশ পাইল না। খুড়াসাহেব ঘুরিয়া ফিরিয়া তাঁহাকে একবার দুর্গপ্রাকারের বামে একবার দক্ষিণে, একবার উপরে একবার নীচে আনিয়া উপস্থিত করিতে লাগিলেন– বার বার বলিতে লাগিলেন, “কী তারিফ!” কিন্তু কিছুতেই সুচেতসিংহের হৃদয়দুর্গ অধিকার করিতে পারিলেন না। অবেশেষে সন্ধ্যাবেলায় শ্রান্ত হইয়া সুচেতসিংহ বলিয়া উঠিলেন “আমি ভরতপুরের গড় দেখিয়াছি, আর-কোনো গড় আমার চক্ষে লাগে না।”
খুড়াসাহেব কাহারও সঙ্গে কখনও বিবাদ করেন না; নিতান্ত ম্লান হইয়া বলিলেন, “অবশ্য, অবশ্য। এ কথা বলিতে পারো বটে।”
নিশ্বাস ফেলিয়া দুর্গ সম্বন্ধে আলোচনা পরিত্যাগ করিলেন। বিক্রমসিংহের পূর্বপুরুষ দুর্গাসিংহের কথা উঠাইলেন। তিনি বলিলেন, “দুর্গাসিংহের তিন পুত্র ছিল। কনিষ্ঠ পুত্র চিত্রসিংহের এক আশ্চর্য অভ্যাস ছিল। তিনি প্রতিদিন প্রাতে আধ সের আন্দাজ ছোলা দুধে সিদ্ধ করিয়া খাইতেন। তাঁহার শরীরও তেমনি ছিল। আচ্ছা জি, তুমি যে ভরতপুরের গড়ের কথা বলিতেছে, সে অবশ্য খুব মস্ত গড়ই হইবে– কিন্তু কই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তো তাহার কোনো উল্লেখ নাই।”
সুচেতসিংহ হাসিয়া কহিলেন, “তাহার জন্য কাজের কোনো ব্যাঘাত হইতেছে না।”
খুড়াসাহেব কাষ্ঠহাসি হাসিয়া কহিলেন, “হা হা হা! তা ঠিক, তা ঠিক, তা ঠিক! তবে কি জনো, ত্রিপুরার গড়ও বড়ো কম নহে, কিন্তু বিজয়গড়ের–”