দেখাইতেছে, কাহারও এমন মুখের ভাব দেখিলে লোকে তাহার নামে নিন্দা রটায়। মহারাজ এত প্রাতে যে নদীতীরে?”
নক্ষত্ররায় কিছু করুণ স্বরে কহিলেন, “আমি যে চলিলাম দেওয়ানজি!”
পীতাম্বর। চলিলেন? কোথায়? ন-পাড়ায়, মণ্ডলদের বাড়ি?
নক্ষত্র। না দেওয়ানজি, মণ্ডলদের বাড়ি নয়। অনেক দূর।
পীতাম্বর। অনেক দূর? তবে কি পাইকঘাটায় শিকারে যাইতেছেন?
নক্ষত্ররায় একবার রঘুপতির মুখের দিকে চাহিয়া কেবল বিষণ্নভাবে ঘাড় নাড়িলেন।
রঘুপতি কহিলেন, “বেলা বহিয়া যায়, নৌকায় উঠা হউক।”
পীতাম্বর অত্যন্ত সন্দিগ্ধ ও ক্রুদ্ধ ভাবে ব্রাহ্মণের মুখের দিকে চাহিলেন; কহিলেন, “তুমি কে হে ঠাকুর? আমাদের মহারাজকে হুকুম করিতে আসিয়াছ!”
নক্ষত্র ব্যস্ত হইয়া পীতাম্বরকে এক পাশে টানিয়া লইয়া কহিলেন, “উনি আমাদের গুরুঠাকুর।”
পীতাম্বর বলিয়া উঠিলেন, “হোক-না গুরুঠাকুর। উনি আমাদের চণ্ডীমণ্ডপে থাকুন, চাল-কলা বরাদ্দ করিয়া দিব, সমাদরে থাকিবেন– মহারাজকে উঁহার কিসের আবশ্যক?”
রঘুপতি। বৃথা সময় নষ্ট হইতেছে– আমি তবে চলিলাম।
পীতাম্বর। যে আজ্ঞে, বিলম্বে ফল কী, মশায় চট্পট্ সরিয়া পড়ুন। মহারাজকে লইয়া আমি প্রাসাদে যাইতেছি।
নক্ষত্ররায় একবার রঘুপতির মুখের দিকে চাহিয়া একবার পীতাম্বরের মুখের দিকে চাহিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, “না দেওয়ানজি, আমি যাই।”
পীতাম্বর। তবে আমিও যাই, লোকজন সঙ্গে লউন। রাজার মতো চলুন। রাজা যাইবেন, সঙ্গে দেওয়ানজি যাইবে না?