পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
১৫

বলিল, “দিল্লীর পথে বিষ খাইব।” নির্ম্মল জানিত ঐ অঙ্গুরীয়তে বিষ আছে।

 নির্ম্মল শিহরিয়া উঠিল; কাঁদিতে কাঁদিতে বলিল, “আর কি কোন উপায় নাই?”

 চঞ্চল বলিল, “আর উপায় কি সখি? কে এমন বীর পৃথিবীতে আছে যে, আমার উদ্ধার করিয়া দিল্লীশ্বরের সহিত শত্রুতা করিবে? রাজপুতনার কুলাঙ্গার সকলি মোগলের দাস—আর কি সংগ্রাম আছে না প্রতাপ আছে?”

 নির্ম্মল। কি বল রাজকুমারি! সংগ্রাম কি প্রতাপ যদি থাকিত, তবে তাহারাই বা তোমার জন্য সর্ব্বস্ব পণ করিয়াই বা দিল্লীর বাদশাহের সঙ্গে বিবাদ করিবে কেন? পরের জন্য কেহ সহজে সর্ব্বস্ব পণ করে না। প্রতাপ নাই, সংগ্রাম নাই, কিন্তু রাজসিংহ আছে—কিন্তু তোমার জন্য রাজসিংহ সর্ব্বস্ব পণ করিবে কেন? বিশেষ তুমি মাড়বারের ঘরানা।

 চঞ্চল। সে কি? বাহুতে বল থাকিতে কোন্ রাজপুত শরণাগতকে রক্ষা করে নাই? আমি তাই ভাবিতেছিলাম নির্ম্মল—আমি এ বিপদে সেই সংগ্রাম প্রতাপের বংশতিলকেরই শরণ লইব—তিনি কি আমায় রক্ষা করিবেন না? বলিতে বলিতে চঞ্চলদেবী ঢাকা ছবিখানি উল্টাইলেন—নির্ম্মল দেখিল সে রাজসিংহের মূর্ত্তি। চিত্র দেখাইয়া রাজকুমারী বলিতে লাগিলেন, “দেখ সখি, এ রাজকান্তি দেখিয়া তোমার কি বিশ্বাস হয় না যে ইনি অগতির গতি, অনাথার রক্ষক? আমি যদি ইহার স্মরণ লই ইনি কি রক্ষা করিবেন না?”

 নির্ম্মলকুমারী অতি স্থিরবুদ্ধিশালিনী—চঞ্চলের সহোদরা-