দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।
মাণিকলাল তখনই রূপনগরে ফিরিয়া আসিল। তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়াছে। রূপনগরের বাজারে গিয়া মণিকলাল দেখিল যে বাজার অত্যন্ত শোভাময়! দোকানের শত শত প্রদীপের শোভায় বাজার আলোকময় হইয়াছে—নানাবিধ খাদ্যদ্রব্য উজ্জ্বলবর্ণে রসনা আকুলিত করিতেছে—পুষ্প, পুষ্পমালা, থরে থরে নয়ন রঞ্জিত, এবং ঘ্রাণে মন মুগ্ধ করিতেছে। মাণিকের উদ্দেশ্য অশ্ব ও অস্ত্র সংগ্রহ করা, কিন্তু তাই বলিয়া আপন উদরকে বঞ্চনা করা মাণিকলালের অভিপ্রায় ছিল না। মাণিক গিয়া কিছু মিঠাই কিনিয়া খাইতে আরম্ভ করিল। সের পাঁচ ছয় ভোজন মরিয়া মাণিক দেড় সের জল খাইল। এবং দোকানদারকে উচিত মূল্য দান করিয়া তাম্বুলাম্বেষণে গেল।
দেখিল একটা পানের দোকানে বড় জাঁক। দেখিল দোকানে বহুসংখ্যক দ্বীপ বিচিত্র ফানুষমধ্য হইতে স্নিগ্ধ জ্যোতিঃ বিকীর্ণ করিতেছে। দেওয়ালে নানা বর্ণের কাগজ, মোড়া—নানা প্রকার বাহারের ছবি লট্কান-তবে চিত্রগুলি একটু বেশীমাত্রায় রঙ্গদার। মধ্য স্থানে কোমল গালিচায় বসিয়া—দোকানের অধিকারিণী তাম্বূলবিক্রেত্রী—বয়সে ত্রিশের উপর কিন্তু কুরূপা নহে। বর্ণ গৌর, চক্ষু বড় বড়, চাহনি বড় কোমল, হাসি বড় রঙ্গদার—সে হাসি অনিন্দ্য দন্তশ্রেণীমধ্যে সর্ব্বদাই খেলিতেছে—হাসির সঙ্গে সর্ব্বালঙ্কার দুলিতেছে— অলঙ্কার কতক পিতল কতক সোনা—কিন্তু সুগঠন এবং সুশোভন। মাণিকলাল দেখিয়া শুনিয়া, পান চাহিল।