পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।
৫৯

“ফুলের মালা পরাও সখি—আমি চিতারোহণে যাইতেছি।” প্রবলবেগে প্রবহমান চক্ষের জল, চক্ষুঃপ্রান্তে ফেরৎ পাঠাইয়া নির্ম্মল বলিল, “রত্নালঙ্কার পরাই সখি, তুমি উদয়পুরেশ্বরী হইতে যাইতেছে।” চঞ্চল বলিল, “পরাও! পরাও! নির্ম্মল! কুৎসিত হইয়া কেন মরিব? রাজার মেয়ে আমি; রাজার মেয়ের মত সুন্দর হইয়া মরিব। সৌন্দর্য্যের মত কোন রাজ্য? রাজত্ব কি বিনা সৌন্দর্য্যে শোভা পায়? পরা।” নির্ম্মল অলঙ্কার পরাইল, সে কুসুমিততরুবিনিন্দিত কান্তি দেখিয়া কাঁদিল। কিছু বলিল না। চঞ্চল তখন, নির্ম্মলের গলা ধরিয়া কাঁদিল।

 চঞ্চল তার পর বলিল, “নির্ম্মল! আর তোমায় দেখিব না! কেন বিধাতা এমন বিড়ম্বনা করিলেন! দেখ ক্ষুদ্র কাঁটার গাছ যেখানে জন্মে সেইখানে থাকে; আমি কেন রূপনগরে থাকিতে পাইলাম না!”

 নির্ম্মল বলিল, “আমায় আবার দেখিবে। তুমি যেখানে থাক; আমার সঙ্গে আবার দেখা হইবে। আমার না দেখিলে তোমার মরা হইবে না; তোমায় না দেখিলে আমার মরা হইবে না।”

 চঞ্চল। আমি দিল্লীর পথে মরিব।

 নির্ম্মল। দিল্লীর পথে তবে আমায় দেখিবে।

 চঞ্চল। সে কি নির্ম্মল? কি প্রকারে তুমি যাইবে?

 নির্ম্মল কিছু বলিল না। চঞ্চলের গলা ধরিয়া কাঁদিল।

 চঞ্চলকুমারী বেশভুষা সমাপন করিয়া মহাদেবের মন্দিরে গেলেন। নিত্যব্রত শিবপূজা ভক্তিভাবে করিলেন। পূজান্তে