পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
রাজসিংহ।

গণকে উপহাস করিবার জন্য তাহার বজ্রনাদ একবার শুনাইল—দীন! দীন! শব্দের সঙ্গে পর্ব্বতে পর্ব্বতে সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হইল। শুনিয়া উত্তরস্বরূপ রন্ধ্রের অপর মুখে হাসান আলিও কামানের আওয়াজ করিলেন; আবার পর্ব্বতে পর্ব্বতে প্রতিধ্বনি বিকট ডাক ডাকিল। রাজপুতগণ শিহরিল— তাহাদের কামান ছিল না।

 রাজসিংহ দেখিলেন, আর কোন মতেই রক্ষা নাই। তাঁহার সৈন্যের বিশগুণ সেনা, পথের দুই মুখ বন্ধ করিয়াছে— পথান্তর নাই—কেবল যমমন্দিরের পথ খোলা। রাজসিংহ স্থির করিলেন সেই পথেই যাইবেন। তখন সৈনিকগণকে একত্রিত করিয়া বলিতে লাগিলেন।

 “ভাই বন্ধু, যে কেহ সঙ্গে থাক, আজি সরলান্তঃকরণে আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাহিতেছি। আমারই দোষে এ বিপদ ঘটিয়াছে— পর্ব্বত হইতে নামিয়াই এ দোষ করিয়াছি। এখন এ গলির দুই মুখ বন্ধ— দুই মুখেই কামান শুনিতেছ! দুই মুখে আমাদের বিশগুণ মোগল দাঁড়াইয়া আছে—সন্দেহ, নাই। অতএব আমাদিগের বাঁচিবার ভরসা নাই। নাই——তাহাতেই বা ক্ষতি কি? রাজপুত হইয়া কে মরিতে কাতর? সকলেই মরিব—একজনও বাঁচিব না—কিন্তু মারিয়া মরিব। যে মরিবার আগে দুইজন মোগল না মারিয়া মরিবে—সে রাজপুত নহে—বিজাতক। রাজপুতেরা শুন। এ পথে ঘোড়া ছুটে না—সবাই ঘোড়া ছাড়িয়া দাও। এসো আমরা তরবারি হাতে লাফাইয়া গিয়া তোপের উপর পড়ি। তোপ ত আমাদেরই হইবে—তার পর দেখা যাইবে কত মোগল মারিয়া মরিতে পারি।”