পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজভক্তি । సెవె সেই মঙ্গল মানুষ যে নিজের গায়ের জোরে পশুর কাছ হইতে আদায় করিয়া লইতেছে, এই ঔদ্ধত্য ভারতবর্ষের নহে। সমস্ত মঙ্গলের মূলে সে দৈব অনুগ্রহকে প্রণাম করিয়া সকলের সঙ্গে আত্মীয়সম্বন্ধ স্থাপন করিতে পারিলে তবে বঁাচে । কারিকর তাহার যন্ত্রকে প্রণাম করে, যোদ্ধা তাহার তরবারীকে প্রণাম করে, গুণী তাহার বীণাকে প্রণাম করে —ইহার ষে যন্ত্রকে যন্ত্র বলিয়া জানে না তাহা নহে ; কিন্তু ইহাও জানে যন্ত্র একটা উপলক্ষ্য মাত্ৰ—যন্ত্রের মধ্য হইতে সে যে আনন্দ বা উপকার লাভ করিতেছে, তাহা কাঠ বা লোহার দান নহে, কারণ, আত্মাকে আত্মীয় ছাড়া কোনো সামগ্রীমাত্রে স্পর্শ করিতে পারে না। এই জন্ত তাহদের কৃতজ্ঞতা, তাহাদের পুজা যিনি বিশ্বযন্ত্রের মন্ত্রী তাহার নিকট এই যন্থযোগেই সমপিত হয় । এই ভারতবর্ষ রাজশাসন-ব্যাপারকে যদি পুরুষরূপে নহে, কেবল যন্ত্ররূপে অনুভব করিতে থাকে, তবে তাহার পক্ষে এমন পীড়াকর আর কিছুই হইতে পারে না । জড়ের মধ্যেও আত্মার সম্পর্ক অনুভব করিয়া তবে যাহার তৃপ্তি হয়, রাষ্ট্ৰতন্ত্রের মত এত বড় মানব-ব্যাপারের মধ্যে সে হৃদয়ের প্রত্যক্ষ আবির্ভাবকে মূৰ্ত্তিমান না দেখিয়া পাচে কিরূপে ? আত্মার সঙ্গে আত্মীয়ের সম্বন্ধ যেখানে আছে সেখানেই নত হওয়া যায়—যেখানে তাহা নাই সেখানে নত হইতে অহরহ বাধ্য হইলে অপমান ও পীড়া বোধ হয় ; অতএব রাষ্ট্রব্যাপারের মধ্যস্থলে আমরা দেবতার শক্তিকে, মঙ্গলের প্রত্যক্ষস্বরূপকে, রাজরূপে দেখিতে পাইলে শাসনের বিপুল ভার সহজে বহন করিতে পারি । নহিলে হৃদয় প্রতিক্ষণেই ভাঙিয়া যাইতে থাকে । আমরা পূজা করিতে চাই—রাজতন্ত্রের মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করিয়া তাহার সহিত আমাদের প্রাণের যোগ অনুভব করিতে চাই—আমরা বলকে কেবলমাত্র বলরূপে সহ্য করিতে পারি না । অতএব ভারতবর্ষের রাজভক্তি প্রকৃতিগত একথা সত্য। কিন্তু সেই