পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ রাজা প্রজা । হইয়া আছে। উত্তেজনা এতই তীব্র যে, যে সকল সাংঘাতিক ব্যাপার আমাদের দেশে অসম্ভব বলিয়া মনে করা যাইত তাহাও সম্ভবপর হইয়াছে। বিরোধ বুদ্ধি এতই গভীর এবং মুদুরবিস্তৃতভাবে ব্যাপ্ত যে কর্তৃপক্ষ ইহাকে বলপূর্বক কেবল স্থানে স্থানে উৎপাটিত করিতে চেষ্টা করিয়া কখনই নিঃশেষ করিতে পরিবেন না, বরঞ্চ ইহাকে আরো প্রবল ও প্রকাও করিয়া তুলিবেন। বর্তমান সঙ্কটে রাজপুরুষদের কি করা কর্তব্য তাহা আলোচনা করিতে গেলে তাহার শ্রদ্ধা করিয়া শুনিবেন বলিয়া ভরসা হয় না । আমরা তাহাদের দওশালার দ্বারে বসিয়া তাহাদিগকে পোলিটিকাল প্রাজ্ঞতা শিক্ষা দিবার চুরাশা রাখি ন}। আমাদের বলিবার কথাও অতি পুরাতন এবং শুনিলে মনে হইবে ভয়ে বলিতেছি। তবু সত্য পুরাতন হইলেও সত্য এবং তাহাকে ভুল বুঝিলেও তাহা সত্য। কথাটি এই—শক্তস্ত ভূষণং ক্ষমা–কথা আরো একটু আছে, ক্ষমা শুধু শক্তের ভূষণ নহে সময় বিশেষে শক্তের ব্রহ্মাস্ত্রও ক্ষমা । কিন্তু আমরা যখন শক্তের দলে নহি তখন এই সাত্ত্বিক উপদেশটি লইয়া অধিক আলোচনা আমাদের পক্ষে শোভা পায় না । ব্যাপারটা দুই পক্ষকে লইয়া—অথচ দুই পক্ষের মধ্যে আপসে বোঝাপড়ার সম্বন্ধ অত্যন্ত ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছে ; একদিকে প্রজার বেদনাকে উপেক্ষা করিয়া বল একান্ত প্রবল মূৰ্ত্তি ধরিতেছে, অন্ত দিকে দুৰ্ব্বলের নিরাশ মনোরথ সফলতার কোনোপথ না পাইয়া প্রতি দিন মরিয়া হইয়া উঠিতেছে ;–এ অবস্থায় সমস্তাটি ছোট নহে। কারণ, আমরা এই দুই পক্ষের ব্যাপারে কেবল এক পক্ষকে লইয়া যেটুকু চেষ্টা করিতে পারি তাহাই আমাদের একমাত্র সম্বল। ঝড়ের দিনে হালের মাঝি নিজের খেয়ালে চলিতেছে ; আমরা দাড় দিয়া যেটুকু রক্ষা করিতে পারি অগত্যা তাহাই করিতে হইবে ;—মাঝি সহায় যদি হয়