পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথ ও পথেয় । ) శిసె অধ্যবসায়ের প্রয়োজন নাই, সুদূর উদ্দেশুকে লক্ষ্য করিয়া সুদীর্ঘ উপায় অবলম্বন করা অনাবশু্যক। ফলে দেখিতেছি পরের শক্তির প্রতি গতকল্য যেমন অন্ধভাবে প্রত্যাশা করিয়া বসিয়া ছিলাম, নিজের শক্তির কাছে আজ তেমনি অন্ধ প্রত্যাশা লইয়া আস্ফালন করিতেছি । তখনো যথাবিহিত কৰ্ম্মকে ফাকি দিবার চেষ্টা ছিল এথনো সেই চেষ্টাই বর্তমান । কথামালার কৃষকের নিশ্চেষ্ট ছেলেরা যতদিন বাপ বাচিয়া ছিল ক্ষেতের ধারেও যায় নাই, বাপ চাষ করিত তাহারা দিব্য খাইত—বাপ যখন মরিল তখন ক্ষেতে নামিতে বাধ্য হইল কিন্তু চাষ করিবার জন্ত নহে— তাহারা স্থির করিল মাটি খুড়িয়া একেবারেই দৈবপন পাইবে। বস্তুত চাষের ফসলই যে প্রকৃত দৈবধন এ কথা শিথিতে তাহাদিগকে অনেক বৃথা সময় নষ্ট করিতে হইয়াছিল । আমরাও যদি এ কথা সহজে না শিথি যে দৈবধন কোনো অদ্ভুত উপায়ে গোপনে পাওয়া যায় না, পৃথিবীমৃদ্ধ লোক সে ধন যেমন করিয়া লাভ করিতেছে ও ভোগ করিতেছে আমাদিগকেও ঠিক তেমনি করিয়াই করিতে হইবে—তবে আঘাত এবং দুঃখ কেবল বাড়িয়াই চলিতে থাকিবে এবং বিপথে যতই অগ্রসর হইব ফিরিবার পথও ততই দীর্ঘ ও দুর্গম হইয়া উঠিবে। অধৈৰ্য্য বা অজ্ঞানবশতঃ স্বাভাবিক পন্থাকে অবিশ্বাস করিয়া অসামান্ত কিছু একটাকে ঘটাইয়া তুলিবার ইচ্ছা অত্যন্ত বেশি প্রবল হইয়া উঠিলে মানুষের ধৰ্ম্মবুদ্ধি নষ্ট হয় ;–তখন সকল উপকরণকেই উপকরণ, সকল উপায়কেই উপায় বলিয়া মনে হয়—তখন ছোট ছোট বালকদিগকেও এই উন্মত্ত ইচ্ছার নিকট নিৰ্ম্মমভাবে বলি দিতে মনে কোনো দ্বিধা উপস্থিত হয় না। আমরা মহাভারতের সোমক রাজার দ্যায় অসামান্ত উপায়ে সিদ্ধিলাভের প্রলোভনে আমাদের অতি সুকুমার ছোট ছেলেটিকেই যজ্ঞের অগ্নিতে সমর্পণ করিয়া বসিয়াছি—এই নিবিচার নিষ্ঠুরতার পাপ চিত্রগুপ্তের দৃষ্টি এড়ায় নাই—তাহার প্রায়শ্চিত্ত আরম্ভ