পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথ ও পাথেয় । >\)● শুনিয়াছি এমন কথাও কেহ কেহ বলেন, যে, ইংরেজের প্রতি দেশের সর্বসাধারণের বিদ্বেষই আমাদিগকে ঐক্যদান করিবে। প্রাচ্য পরজাতীয়ের প্রতি স্বাভাবিক নিৰ্ম্মমতায় ইংরেজ ঔদাসীন্তে ও ঔদ্ধত্যে ভারতবর্ষের ছোট বড় সকলকেই ব্যথিত করিয়া তুলিতেছে। যত দিন যাইতেছে এই বেদনার তপ্ত শেল গভীর ও গভীরতররূপে আমাদের প্রকৃতির মধ্যে অসুবিদ্ধ হইয়া চলিয়াছে। এই নিত্যবিস্তারপ্রাপ্ত বেদনাব ঐক্যেই ভারতের নানা জাতি মিলিবার উপক্রম করিতেছে। অতএব এই বিদ্বেষকেই আমাদের প্রধান আশ্রয়রপে অবলম্বন করিতে হইবে। একথা যদি সত্যই হয় তবে বিদ্বেষের কারণটি যখন চলিয়া যাইবে, ইংরেজ যখনি এ দেশ ত্যাগ করিবে, তখনি কৃত্রিম ঐক্যসূত্রটি ত এক মুহূর্বে ছিন্ন হইয়া যাইবে। তখন দ্বিতীয় বিদ্বেষের বিষয় আমরা কোথায় খুজিয়া পাইব ? তখন আর দূরে খুজিতে হইবে না, বাহিরে যাইতে হইবে না, রক্তপিপাসু বিদ্বেষবুদ্ধির দ্বারা আমরা পরস্পরকে ক্ষতবিক্ষত করিতে থাকিব । “ততদিনে যেমন করিয়াই হৌক একটা কিছু সুযোগ ঘটিয়া যাইবেই, আপাতত এই ভাবেই চলুক্‌” এমন কথা যিনি বলেন তিনি এ কথা ভুলিয়া যান যে, দেশ তাহার একলার সম্পত্তি নহে ; ব্যক্তিগত রাগ দ্বেষ ও ইচ্ছা অনিচ্ছা লইয়া তিনি চলিয়া গেলেও এ দেশ রহিয়া যাইবে । ট্রষ্টি যেমন সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রশস্ত উপায় ব্যতীত দ্যস্ত ধনকে নিজের ইচ্ছামত যেমন তেমন করিয়া খাটাইতে পারেন না তেমনি দেশ যখন বহু লোকের এবং বহু কালের, তাহার মঙ্গলকে কোনো সামরিক ক্ষোভের বেগে অদূরদর্শ আপাতবুদ্ধির সংশয়াপন্ন ব্যবস্থার হাতে চক্ষু বুজিয়া সমর্পণ করিবার অধিকার আমাদের কাহারো নাই। স্বদেশের ভবিষ্যৎ যাহাতে দায়গ্ৰস্ত হইয়া উঠিতেও পারে এমনতর নিতান্ত ঢিলা বিবেচনার কাজ বৰ্ত্তমানের প্ররোচনায় করিয়া ফেলা কোনো লোকের পক্ষে কখনই