চতুর্থ খণ্ড সকলের কথা প্রথম পরিচ্ছেদ লবঙ্গলতার কথা বড় গোল বাধিল । আমি ত সন্ন্যাসী ঠাকুরের হাতে পায়ে ধরিয়া, কাদিয়া কাটিয়া, শচীন্দ্রকে রজনীর বশীভূত করিবার উপায় করিতেছি। সন্ন্যাসী আসিদ্ধ ; জগদম্বার কৃপায় যাহা মনে করেন, তাই করিতে পারেন। মিত্র মহাশয় যষ্টি বৎসর বয়সে যে, এ পামরীর এত বশীভূত, তাহ আমার গুণে, কি সন্ন্যাসী ঠাকুরের গুণে, তাহ বলিয়া উঠা ভার ; আমিও কায়মনোবাক্যে পতিপদসেবার ত্রুটি করি না, ব্রহ্মচারীও আমার জন্ত যাগ, যজ্ঞ, তন্ত্র, মন্ত্র প্রয়োগে ক্রটি করেন না। যাহার জন্ত যাহা তিনি করিয়াছেন, তাহ ফলিয়াছে। কামারবউর পিতলের টুক্নী সোণা করিয়া দিয়াছিলেন—উনি না পারেন কি ? উহার মস্ত্রৌষধির গুণে শচীন্দ্র যে রজনীকে ভালবাসিবে-রজনীকে বিবাহ করিতে চাহিবে, তাহাতে আমার কোন সন্দেহই নাই, কিন্তু তবু গোল বাধিয়াছে। গোলযোগ অমরনাথ বাধাইয়াছে। এখন শুনিতেছি, অমরনাথের সঙ্গেই রজনীর বিবাহ স্থির হইয়াছে। রজনীর মাসী মাসুয়া, রাজচন্দ্র এবং তাহার স্ত্রী, আমাদিগের দিকে। তাহার কারণ, কর্তা বলিয়াছেন, বিবাহ যদি হয়, তবে তোমাদিগকে ঘটকবিদায়স্বরূপ কিছু দিব। কথাটা ঘটকবিদায়, কিন্তু আঁচটা ছ হাজার দশ হাজার। কিন্তু তাহারা আমাদিগের দিকে হইলেও কিছু হইতেছে না। অমরনাথ ছাড়িতেছে না। সে নিশ্চয় রজনীকে বিবাহ করিবে, জিদ করিতেছে । ভাল, অমরনাথ কে ? মেয়ের বিবাহ দিবার কৰ্ত্ত হইল, তাহার মাস্বয় মাসী,বাপ মা বলাই উচিত—দ্রাজচন্দ্র ও তাহার স্ত্রী, তাহার। যদি আমাদিগের দিকে, তবে অমরনাথের জিদে কি আসিয়া যায় ? সে তাহাদিগকে বিষয় দেওয়াইয়া দিয়াছে বটে, কিন্তু তাহার মেহনতান দুই চারি হাজার খরিয়া দিলেই হইবে। আমার ছেলের বৌ করিব বলিয়া জামি যে কঙ্কার লম্বন্ধ করিতেছি, অমরনাথ কি না তাহাকে বিবাহ কৰিতে চায়।
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।