চতুর্থ খণ্ড : তৃতীয় পরিচ্ছেদ Øፃ “যাও।” ললিতলবঙ্গলতা, ললিত লবঙ্গলতার মত তুলিতে ফুলিতে চলিল। ক্ষণেক পরে আমাকে ডাকিয়া পাঠাইল। গিয়া দেখিলাম, লবঙ্গলতা দাড়াইয়া আছে। রজনী তাহার পায়ে হাত দিয়া কাদিতেছে । আমি গেলে লবঙ্গলত বলিল, “শুন, তোমার ভবিষ্যৎ ভাৰ্য্য কি বলিতেছে! তোমার সম্মুখে নহিলে এমন কথা আমি কাণে শুনিব না।” আমি বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি ?” - লবঙ্গলতা রজনীকে বলিল, “বল। তোমার বর আসিয়াছেন—” রজনী সকাতরে অশ্রুপূর্ণলোচনে ললিতলবঙ্গলতার চরণস্পর্শ করিয়া বলিল, “আমার এই ভিক্ষ, আমার যে কিছু সম্পত্তি আছে, এই বাবুর যত্নে আমার যে সম্পত্তি উদ্ধৃত হইয়াছে, আমি লেখাপড়া করিয়া আপনাকে দান করিব, আপনি গ্রহণ করিবেন না কি ?” আহলাদে আমার সর্ববান্তঃকরণ প্লাবিত হইল—আমি রজনীর জন্য যে যত্ন করিয়াছিলাম—যে ক্লেশ স্বীকার করিয়াছিলাম—তাহ সার্থক বোধ হইল। আমি পূৰ্ব্বেই বুঝিয়ছিলাম, এখন আরও পরিষ্কার বুঝিলাম যে, রমণীকুলে, অন্ধ রজনী অদ্বিতীয় রত্ন । লবঙ্গলতার প্রোজ্জল জ্যোতিও তাহার কাছে মান হইল। আমি ইতিপূৰ্ব্বেই রজনীর অন্ধ নয়নে আত্মসমর্পণ করিয়াছিলাম—আজি তাহার কাছে বিনামূল্যে বিক্রীত হইলাম। এই অমূল্য রত্বে আমার অন্ধকারপুরী প্রভাসিত করিয়া, এ জীবন মুখে কাটাইব। বিধাতা আমার কি সে দিন করিবেন না ! তৃতীয় পরিচ্ছেদ লবঙ্গলতার কথা আমি মনে করিয়াছিলাম, রজনীর এই বিস্ময়কর কথা শুনিয়া, অমরনাথ আগুনে সেঁকা কলাপাতের মত শুকাইয়া উঠিবে। কই, তাহ ত কিছু দেখিলাম না। তাহার মুখ না শুকাইয়া বরং প্রফুল্প হইল। বিস্মিত হতবুদ্ধি, যা হইবার, তাহা আমিই হইলাম। আমি প্রথমে তামাস মনে করিলাম, কিন্তু রজনীর কাতরত, অশ্রুপাত এবং দার্ট্য দেখিয়া আমার নিশ্চয় প্রতীতি জন্মিল যে, রজনী আন্তরিক বলিতেছে । আমি বলিলাম, “রজনী।” কায়েতের কুলে তুমিই ধষ্ঠ ! তোমার মত কেহ নাই। কিন্তু আমি তোমার দান গ্রহণ করিব না।”
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।