দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ এ ভবের হাট হইতে আমার দোকানপাঠ উঠাইতে হইল। আমার অদৃষ্টে সুখ বিধাতা লিখেন নাই—পরের সুখ কাড়িয়া লইব কেন ? শচীন্দ্রের রজনী শচীশ্রকে দিয়া আমি এ সংসার ত্যাগ করিব । এ হাট ভাঙ্গিব, এ হৃদয়কে শাসিত করিব—যিনি সুখদুঃখের অতীত, তাহারই চরণে সকল সমৰ্পণ করিব। প্রভো, তোমায় অনেক সন্ধান করিয়াছি, কই তুমি ? দর্শনে বিজ্ঞানে তুমি নাই। জ্ঞানীর জ্ঞানে, ধ্যানীর ধ্যানে তুমি নাই। তুমি অপ্রমেয়, এজন্য তোমার পক্ষে প্রমাণ নাই। এই ফুটিতোমূখ হৃদপদ্মই তোমার প্রমাণ—ইহাতে তুমি আরোহণ কর। আমি অন্ধ পুষ্পনারীকে পরিত্যাগ করিয়া, তোমার ছায়। সেখানে স্থাপন করি। তুমি নাই ? না থাক, তোমার নামে আমি সকল উৎসর্গ করিব। অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরং তস্মৈ নমঃ বলিয়া এ কলঙ্কলাঞ্ছিত দেহ উৎসর্গ করিব। তুমি যাহা দিয়াছ, তুমি কি তাহ লইবে না ? তুমি লইবে, নহিলে এ কলঙ্কের ভার আর কে পবিত্র করিবে ? -- প্রভো ! আপনার কাছে একটা নিবেদন আছে। এ দেহ কলঙ্কিত করাইল কে, তুমি, না আমি ? আমি যে অসৎ অসার, দোষ আমার, না তোমার ? অামার এ মনিহারির দোকান সাজাইল কে, তুমি, না আমি ? যাহা তুমি সাজাইয়াছ, তাহা তোমাকেই দিব। আমি এ ব্যবসা আর রাখিব না । 總 মুখ । তোমাকে সৰ্ব্বত্র খুজিলাম—পাইলাম না। মুখ নাই—তবে আশায় কাজ কি ? যে দেশে অগ্নি নাই, সে দেশে ইন্ধন আহরণ করিয়া কি হইবে ? প্রতিজ্ঞ করিয়াছি, সব বিসর্জন দিব । আমি পরদিন শচীন্দ্রকে দেখিতে গেলাম। দেখিলাম, শচীন্দ্র অধিকতর স্থির— অপেক্ষাকৃত প্রফুল্ল। তাহার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথোপকথন করিতে লাগিলাম। বুঝিলাম, আমার উপর যে বিরক্তি, শচীন্দ্রের মন হইতে তাহ যায় নাই । পরদিন পুনরপি তাহাকে দেখিতে গেলাম। প্রত্যহই তাহাকে দেখিতে যাইতে লাগিলাম। শচীন্দ্রের দুৰ্ব্বলতা ও ক্লিষ্টভাব কমিল না, কিন্তু ক্রমে স্থৈৰ্য্য জন্মিতে লাগিল । প্ৰলাপ দূর হইল। ক্রমে শচীন্দ্র প্রকৃতিস্থ হইলেন।
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।