. চতুর্থ পরিচ্ছেদ ইহার দুই বৎসর পরে, একদা ভ্রমণ করিতে করিতে আমি ভবানীনগর গেলাম। শুনিলাম যে, মিত্রবংশীয় কেহ তথায় আসিয়া বাস করিতেছেন। কৌতুহলপ্রযুক্ত আমি দেখিতে গেলাম। দ্বারদেশে শচীন্দ্রের সহিত সাক্ষাৎ হইল। শচীন্দ্র আমাকে চিনিতে পারিয়া, নমস্কার আলিঙ্গনপূর্বক আমার হস্ত ধারণ করিয়া লইয়া উত্তমাসনে বসাইলেন। অনেকক্ষণ র্তাহার সঙ্গে নানাবিধ কথোপকথন হইল। র্তাহার নিকট শুনিলাম যে, তিনি রজনীকে বিবাহ করিয়াছেন। কিন্তু রজনী ফুলওয়ালী ছিল, পাছে কলিকাতায় ইহাতে লোকে ঘৃণা করে, এই ভাবিয়া, তিনি কলিকাতা পরি ত্যাগ করিয়া ভবানীনগরে বাস করিতেছেন। র্তাহার পিতা ও ভ্রাত কলিকাতাতেই বাল झहिज्राइन । আমার নিজসম্পত্তি প্রতিগ্রহণ করিবার জন্ত শচীন্দ্র আমারে বিস্তর অনুরোধ করিলেন। কিন্তু বলা বাহুল্য যে, আমি তাহাতে স্বীকৃত হইলাম না। শেষে শচীন্দ্র রজনীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আমাকে অনুরোধ করিলেন। আমারও সে ইচ্ছা ছিল। শচীন্দ্র আমাকে অন্তঃপুরে রজনীর নিকটে লইয়া গেলেন। - রজনীর নিকট গেলে, সে আমাকে প্রণামপূর্বক পদধূলি গ্রহণ করিল। আমি দেখিলাম যে, ধূলিগ্রহণকালে, পাদস্পর্শ জন্ত, অন্ধগণের স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী সে ইতস্ততঃ হস্তসঞ্চালন করিল না, এককালেই আমার পাদস্পর্শ করিল। কিছু বিস্মিত হইলাম। সে আমাকে প্রণাম করিয়া দাড়াইল। কিন্তু মুখ অবনত করিয়া রহিল। আমার বিস্ময় বাড়িল। অন্ধদিগের লজ্জা চক্ষুর্গত নহে। চক্ষে চক্ষে মিলনজনিত যে লজ্জা, তাহ তাহাদিগের ঘটিতে পারে না বলিয়, তাহারা দৃষ্টি লুকাইবার জন্য মুখ নত করে না। একটা কি কথা জিজ্ঞাসা করিলাম, রজনী মুখ তুলিয়া আবার নত করিল, দেখিলাম-নিশ্চিত দেখিলাম—সে চক্ষে কটাক্ষ । জন্মান্ধ রজনী কি এখন তবে দেখিতে পায় ? আমি শচীন্দ্রকে এই কথা জিজ্ঞাসা করিতে যাইতেছিলাম, এমত সময়ে শচীন্দ্র আমাকে বসিবার আসন দিবার জন্য রজনীকে আজ্ঞা করিলেন। রজনী একখানা কাপেট লইয়া পাতিতেছিল—যেখানে পাতিতেছিল, সেখানে অল্প একবিন্দু জল পড়িয়াছিল ; রজনী আসন রাখিয়া, অগ্রে অঞ্চলের দ্বার। জল o
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।