> $8 রাধরাণী এমত সময়ে বিলাত হইতে সংবাদ আসিল যে, প্রিবি কেন্সিলের আপীল তাহার পক্ষে নিম্পত্তি পাইয়াছে ; তিনি আপন সম্পত্তি পুনঃপ্রাপ্ত হইবেন, ওয়াশিলাতের টাকা ফেরত পাইবেন এবং তিন আদালতের খরচ পাইবেন । কামাখ্যানাথ বাবু তাহার পক্ষে হাইকোর্টের উকীল ছিলেন, তিনি স্বয়ং এই সংবাদ লইয়। রাধারাণীর মাতার কুটীরে উপস্থিত হইলেন। সুসংবাদ শুনিয়া, রুগ্নার অবিরল নয়নাশ্র পড়িতে লাগিল। তিনি নয়নাঙ্ক সংবরণ করিয়া কামাখ্যা বাবুকে বলিলেন, “যে প্রদীপ নিবিয়াছে, তাহাতে তেল দিলে কি হইবে ? আপনার এ সুসংবাদেও আমার আর প্রাণরক্ষা হইবে না। আমার আয়ুঃশেষ হইয়াছে। তবে আমার এই মুখ যে, রাধারাণী আর অনাহারে প্রাণত্যাগ করিবে না। তাই বা কে জানে? সে বালিক, তাহার এ সম্পত্তি কে রক্ষা করিবে ? কেবল আপনিই ভরসা। আপনি আমার এই অন্তিম কালে আমারে একটি ভিক্ষা দিউন—নহিলে আর কাহার কাছে চাহিব ।” কামাখ্যা বাৰু অতি ভদ্র লোক এবং তিনি রাধারাণীর পিতার বন্ধু ছিলেন। রাধারাণীর মাতা তুর্দশাগ্রস্ত হইলে, তিনি রাধারাণীর মাতাকে বলিয়াছিলেন যে, যত দিন না আপীল নিম্পত্তি পায়, অন্ততঃ তত দিন তোমরা আসিয়া আমার গুহে অবস্থান কর, আমি আপনার মাতার মত তোমাকে রাখিব । রাধীরাণীর মাতা তাহাতে অস্বীকৃত হইয়াছিলেন । পরিশেষে কামাখ্যা বাবু কিছু কিছু মাসিক সাহায্য করিতে চাহিলেন। “আমার এখনও কিছু হাতে আছে—আবশ্যক হইলে চাহিয়া লইব ।” এইরূপ মিথ্যা কথা বলিয়। রাধারাণীর মাতা সে সাহায্য গ্রহণে অস্বীকৃত হইয়াছিলেন । রুক্মিণীকুমারের দান গ্রহণ র্তাহাদিগের প্রথম ও শেষ দান গ্রহণ । là কামাখ্যা বাবু এতদিন বুঝিতে পারেন নাই যে, তাহারা এরূপ দুৰ্দ্দশাগ্রস্ত হইয়াছেন। দশা দেখিয়া কামাখ্যাবাবু অত্যন্ত কাতর হইলেন। আবার রাধারাণীর মাত, যুক্তকরে র্তাহার কাছে ভিক্ষ চাহিতেছেন, দেখিয়া আরও কাতর হইলেন ; বলিলেন, “আপনি আজ্ঞা করুন, আমি কি করিব ? আপনার যাহা প্রয়োজনীয়, আমি তাহাই করিব।” রাধারাণীর মাত বলিলেন, “আমি চলিলাম, কিন্তু রাধারাণী রহিল। এক্ষণে আদালত হইতে আমার শ্বশুরের যথার্থ উইল সিদ্ধ হইয়াছে ; অতএব রাধারাণী এক সমস্ত সম্পত্তির অধিকারিণী হইবে। আপনি তাহাকে দেখিবেন, আপনার কন্যার স্যায় তাহাকে রক্ষা করিবেন, এই আমার ভিক্ষা । আপনি এই কথা স্বীকার করিলেই আমি মুখে মরিতে পারি।”
পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।